আহমেদ ইউসুফ, কুবি প্রতিনিধি
কথায় বলে, ‘গাছ তোর নাম কি ফলে পরিচয়’, বাস্তবতাও তাই গোড়ায় সমৃদ্ধিমাখা শিকড় থাকলে ফল সুষম হবে। উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করার জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ভিত্তিক গবেষণার কাঠামো নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেখানকার শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার মান নিশ্চিত করার বিকল্প কোনো পথ থাকতে পারে না।
কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পার করে এখনো এখানে মাত্র ১২ জন পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক, কিছু সংখ্যক পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক, গুটিকয়েক সহযোগী অধ্যাপক, বাকি সর্বোচ্চ সংখ্যায় প্রভাষক থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক এবং নতুন নিয়োগ হওয়া প্রভাষকদের দিয়েই চলছে পাঠদান এবং শিক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম।
তবে স্বল্প সংখ্যায় পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক যে কয়েকজন রয়েছেন তাদেরই সামাল দিতে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর দৌড়ঝাঁপ। আবার প্রয়োজনের সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশিরভাগই ব্যস্ত থাকে তারা। যার ফলে শিক্ষার্থীরা মূলত একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে রেজিট্রার অফিসে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের বিস্তারিত তালিকা চাওয়া হলে সহকারী রেজিস্ট্রার বিপলব মজুমদার দৈনিক অধিকারকে জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট শিক্ষক সংখ্যা ২২৭ জন, তার মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছেন ৪০ জন, পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক আছেন ১২ জন, প্রভাষক থেকে পদোন্নতি নিয়ে সহকারী অধ্যাপক ১১০ জন, পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক আছেন ২৮ জন, প্রভাষক আছেন নতুন এবং পুরাতন মিলে ৭৫ জন, তার মধ্যে নতুন নিয়োগে ৫১ জন।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই যুগে পা রেখেও কেন তাহলে সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি! যদিও সিনিয়র শিক্ষকের মেধা এবং দক্ষতার অভাব একজন জুনিয়র শিক্ষক কখনোই পূরণ করতে সক্ষম নন। যে বিষয়টি এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের মনে প্রশ্নের বীজ বপন করে যায়।
কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে আইসিটি বিভাগের সাইয়েদ মাখদুম নামের এক সিনিয়র শিক্ষার্থী বলেন, তুলনামূলক নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যালেঞ্জ অনেক। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সেক্ষেত্রে একজন অধ্যাপক কিংবা অভিজ্ঞ শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ঝুলি ওনাদের একটু বেশিই হয় বৈকি। যা শিক্ষার্থীদের মৌলিক মান উন্নয়নের অনুঘটক। প্রভাষক হিসেবে যোগদান করা শিক্ষকগণ প্রয়োজনীয় পদোন্নতি পেয়ে সে পর্যায়ে যাওয়া অনেক সময় সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরাসরি প্রবীণ শিক্ষক নিয়োগের দিকে নজর দিতে হবে।
সিনিয়র শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও জুনিয়র শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. আবু তাহের জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা দীর্ঘদিন পাঠদান করেছেন, মান উন্নয়নের ভিত্তিতে আমরা সিনিয়র পদগুলোয় নিয়ম অনুযায়ী তাদের এনেছি। আবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘সি’ ক্যাটাগরির হওয়ায় আমরা শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে উন্নতি করা একান্ত প্রয়োজন, যার জন্য সিনিয়র শিক্ষকের বিকল্প নেই। তাই আমরা পরবর্তী সার্কুলারের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি।
এ দিকে, সিনিয়র শিক্ষকের ভূমিকা এবং দক্ষতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের গুরত্ব নিয়ে বলার কিছু নেই। একজন শিক্ষক শুধু ছাত্রদের পাঠদান করবে তা নয়, বরং তার অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে গবেষণা করা। এক্ষেত্রে একজন সিনিয়র শিক্ষকের অভিজ্ঞতা তার গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তুলনামূলক নবীন, এখানে সিনিয়র শিক্ষক কম হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমি মনে করি এক্ষেত্রে প্রশাসনের আন্তরিকতা একটা বড় বিষয় ছিল। তারা চাইলে পদ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারত।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড