• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

খুবিতে দ্বিতীয় উপকূলীয় পানি সম্মেলন

উপকূলে নিরাপদ পানির জন্য বাড়তি বাজেটের দাবি

  খুবি প্রতিনিধি

০২ আগস্ট ২০১৯, ২০:৫৪
খুবিতে পানি সম্মেলন
দ্বিতীয় উপকূলীয় পানি সম্মেলন (ছবি : সংগৃহীত)

১৩ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) অনুষ্ঠিত হওয়া দুই দিনব্যাপী দ্বিতীয় উপকূলীয় পানি সম্মেলন শেষ হয়েছে।

শুক্রবার (২ আগস্ট) সমাপনী অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে খুবির পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত উপকূলীয় পানীয় জলের সংকট নিরসনে ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে অন্যতম দাবি, স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সারা দেশের মতো নয়; বরং উপকূলের জন্য বাড়তি বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে সমাপনী দিনের প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন্নাহার এমপি। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে খুলনা তথা সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার ভৌগোলিক ও পরিবেশগত পার্থক্য রয়েছে। জলবায়ু গত পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন এই খুলনা উপকূলীয় এলাকা। এর মধ্যে পানীয় জল সংকটের বিষয়টি সবচেয়ে অগ্রাধিকার যোগ্য।

তিনি আরও বলেন, খুলনা উপকূলীয় অঞ্চল যেহেতু সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে তাই এই এলাকার সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। পানীয় জলের সংকট নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। তিনি এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুপারিশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।

দিনের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. খায়রুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের নবযাত্রা প্রকল্পের চিফ অব পার্টি রাকশ কটাল। দ্বিতীয় পর্ব বিশেষ অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাধন রঞ্জন ঘোষ, বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শ্যামল দত্ত। ১৩ দফা খুলনা ঘোষণা পাঠ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত।

দ্বিতীয় উপকূলীয় পানি সম্মেলন খুলনা ঘোষণার ১৩ দফার মধ্য রয়েছে- ১. পানিকে শুধুই ‘সম্পদ’ বিবেচনা না করে পরিবেশের একটি মৌলিক উপাদান বিবেচনায় নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ২. উপকূলীয় এলাকার সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যমান পানি সংকট নিরসনে প্রাজন্মিক সমাধান সত্ত্ব নীতিমালা প্রণয়ন ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ৩. এই অঞ্চলের ভূ-উপরিস্থ পানির উৎসসমূহ তথা প্রাকৃতিক এবং রাষ্ট্রীয় জলাধারসমূহ (পুকুর, খাল ইত্যাদি) লিজ প্রদানের প্রথা/আইন বাতিল কর এগুলো খাবার পানি, কৃষি-সেচ, ঘর গৃহস্থালির ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। এ সংক্রান্ত বিষয় সরকারের একক মন্ত্রণালয়ের অধীন সম্বলিত ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ৪. উপকূলীয় অঞ্চলের সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনা, জোয়ার ভাটা প্রবাহ, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীব-বৈচিত্র্য, উপকূলীয় জীবন-জীবিকা এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিবেচনায় নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ও স্থানীয় মানুষের কার্যকরী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ৫. সকল প্রকার অবকাঠামো নির্মাণ এই অঞ্চলের পানি প্রবাহের গতি-প্রকৃতি ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত ক্রিয়া-বিক্রিয়া বিবেচনায় আনতে হবে। ৬. স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করত হবে সারা দেশের মতো নয়; বরং উপকূলের জন্য বাড়তি বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। ৭. মনুষ্যসৃষ্ট জলাবদ্ধতা এবং নোনাপানির সংরক্ষণের উদ্যোগগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করত হবে এবং স্বাদু পানির জলাধারগুলোকে নোনা পানির দূষণ থেকে নিরাপদ রাখার জন্য সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পানি কেন্দ্রিক অপরিকল্পিত বাণিজ্য, বিশেষ করে চিংড়ি ঘের বন্ধ করতে হবে। ৮. জলাবদ্ধতা রোধে নদীগুলোকে অবমুক্ত করতে হবে এবং বিল ও বাওড়গুলির সঙ্গে নদীর সংযোগ সাবলীল করতে হবে। ৯. উপকূলীয় পানি সমস্যার সমাধান কল্পে এ অঞ্চলের ১৪ জন সংসদ-সদস্যের সমন্বয়ে পালার্মেন্টারি বোর্ড গঠন করতে হবে; যারা সংসদে এ বিষয়ক আলোচনা অব্যাহত রাখবেন। ১০. উপকূলর দরিদ্র মানুষকে স্যানিটেশনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ১১. উপকূলের পানি ও পয়:নিষ্কাশন সংকট মোকাবিলার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ১২. পানির উৎস সমূহকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং পরিবেশ রক্ষায় ‘মনুষ্য মল ব্যবস্থাপনার প্রতি জোর দিতে হবে। ১৩. সর্বোপরি, পানি রক্ষায় রাষ্ট্রীয়, সরকারি এবং বেসরকারি খাতসহ সকলকে সাথে নিয়ে একটি সমন্বয় দল গঠন করতে হবে। যার মাধ্যমে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড