মোহাম্মদ রনি খাঁ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক বৈধ উপাচার্যের দাবিতে লাগাতার ৬৮ দিনের আন্দোলনের ৪৫ দিন পরে এসেও উপাচার্য সংক্রান্ত আশানুরূপ কোন সংবাদ পায়নি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গণবি) শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ জুড়ে নানা গুঞ্জন, উৎকণ্ঠা ও উদ্ধেগের টানা ৬৮ দিন (৬ এপ্রিল-১৩ জুন) ভিন্ন মঞ্চের অভিনয়ের মাধ্যমে কাটে নাটকীয়তায় চলতে থাকা বৈধ উপাচার্য দাবির আন্দোলন।
শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আন্দোলনকে ঘিরে (৪ এপ্রিল) জন্ম নেয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্র পরিষদ নামে নতুন সংগঠনের। যাদের নেতৃত্বেই ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে আন্দোলন রূপ নেয় ৬৮ দিনে।
শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি, মিটিং, মিছিল, অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা, ১৪ শিক্ষার্থীর অনশন (৯ এপ্রিল), বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাষ্টি বোর্ডের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ‘অসফল মিটিং’ (১৪ এপ্রিল), উপাচার্যের বাস ভবন ঘিরে বিক্ষোভ (৬ মে), প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বেতন বন্ধের নোটিশ (১১ মে), শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ফোনালাপ ফাঁস (১২ জুন) হয়।
ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার তিনদিন পরেই (১৫ জুন) আসে আন্দোলন সফল হওয়ার ঘোষণা। পরে সাধারণ ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে মিষ্টি বিতরণ হওয়ার মত একের পর এক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে চলে টানা ৬৮ দিনের এই আন্দোলন।
এ বছরের ৩ এপ্রিল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক-আল জলিলের হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানুকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ প্রকাশিত হয়। কিন্তু উপচার্য নিয়ে এ চলমান সমস্যার কোন অগ্রগতি না পেয়ে ইউজিসি কর্তৃক বৈধ উপাচার্যের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনার পরে ৩ জুন নির্ধারিত ৬০ দিন অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত উপাচার্য নিয়োগের কোনো গ্রহণযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে সক্ষম হয়নি গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৈধ উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট সুরাহা পায়নি শিক্ষার্থীরা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কথায় আস্থা রাখতে পারছে না বলেও জানিয়েছেন একাধিক অভিভাবক।
এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্র পরিষদের পক্ষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা কি শুধুই প্রহসন? এখন এমন প্রশ্নই দেখা দিচ্ছে ভুক্তভোগী হাজারো শিক্ষার্থীর চোখেমুখে।
বৈধ উপাচার্যের দাবিতে গণবি শিক্ষার্থীদের অনশন (দৈনিক : অধিকার)
তাহলে টানা ৬৮ দিনের আন্দোলনের ফল কি? এমন প্রশ্নে সাধারণ ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান রনি জানান, ‘আসলে ফল আশানুরূপ নয়, আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল খুব শিগগিরই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, আমরা তাদের কথা বিশ্বাস করে ৬৮ দিনের মাথায় আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু প্রশাসন এখনো তাদের কথা রাখতে পারেনি।’
তিনি আরও জানান, ‘সাধারণ ছাত্র পরিষদ এই ক্ষতির দ্বায়ভার নেবে না, শিক্ষার্থীরা নিজ থেকেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। যখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান মনিরুল হাসান মাসুম, সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মদ মুকাম্মেল ও হিসাব শাখার জ্যৈষ্ঠ সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে পাঠিয়েছিল, তখন আমরা তাদের কথা বিশ্বাস করে ক্লাসে ফিরে যাই। তাই আন্দোলনের দ্বায়ভার এই তিনজনকেও নিতে হবে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান মনিরুল হাসান মাসুম জানান, ‘সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল। যদি তারা নিয়মিত আন্দোলন চালিয়ে যেত, তাহলে তাদের শিক্ষা জীবন ব্যাহত হতো। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই আমরা তাদের পরীক্ষায় বসতে বলি এবং সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও বলা হয়েছিল খুব দ্রুত উপাচার্য সমস্যা সমাধান হতে চলেছে। এখন যদি তারা এ বিষয়ে আমাদের দোষারোপ করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’
হিসাব শাখার জ্যৈষ্ঠ সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঈদের আগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না হলে শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়তো। আর তখন উপাচার্য নিয়োগের ফাইল অনেক দূর এগিয়ে ছিলো। এ জন্যই উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত কাজের অগ্রগতি বিবেচনা ও শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে আমরা অতি শিগগিরই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশ্বাস দেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ট্রাস্টি বোর্ড যদি এ ব্যাপারে আন্তরিক না হয়ে শুধুমাত্র আমাদের দোষারোপ করে তবে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করালো ছাত্র পরিষদ। আর আন্দোলন থেকে সরে গেল কোন সুফল না বুঝে পেয়েই। যে আশায় আন্দোলনে নেমেছিল প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী, সে আশা পূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও আন্দোলন থেকে কেন সরে গিয়েছিল এখন বুঝতে বা বোঝাতে পারছেনা কেউই। শুধু একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে ক্ষতির ভাগীদার যে একমাত্র শিক্ষার্থীরাই হচ্ছেন তা আর বুঝতে বাকি নেই কারোরই।
তবে সাধারণ ছাত্র পরিষদ আর মিথ্যাচারী প্রশাসন একই কাতারে এসে পড়ল বলে দাবি তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তানিশা মাহবুব জানান, ‘দাবিটা আমাদের সবার ছিল, তাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছিলাম। কিন্তু ফলাফল শূন্য আবার সেই সঙ্গে ক্ষতির দ্বায়ভার সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাঁধেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তখন নিজেকে খুব বোকা মনে হয়েছে। এখন আমরা নিজেরাই সন্দ্বিহান যে এমন দায়িত্বহীন মানুষের নেতৃত্বে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া আসলেও ঠিক হয়েছিল কিনা?’
ওডি/এসএসকে
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড