• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাকসু নিয়ে যা ভাবছে ছাত্র সংগঠনের নেতারা

  আরিফুল ইসলাম আরিফ, জাবি প্রতিনিধি

২৭ জুলাই ২০১৯, ১১:৪৫
জাকসু
জাকসু ভবন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো জাকসুর দাবিতে আন্দোলন করে আসলেও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। অবশেষে গেল ২৮ জুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করার ঘোষণা দেন এবং এ বছর নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সম্ভাবনা প্রকাশ করেন।

উপাচার্যের এই ঘোষণার পর জাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে সকল মহলই আশাবাদী। তবে কেমন হতে পারে জাকসু নির্বাচন? কতটুকু স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বা ক্যাম্পাস নির্বাচনের জন্য কতটুকু তৈরি?, নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক অধিকারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম আরিফ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা জাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রস্তুতি এবং প্রার্থী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত জাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র নেতৃত্বের যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা পূরণে জাকসুর কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীবান্ধব জাকসু তৈরিতে ছাত্রলীগ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে এবং জাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্রলীগ সবাইকে সাহায্য করে যাবে। জাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৎ এবং যোগ্য ব্যাক্তিদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ভেতর কোনো কোন্দল নেই। তবে কোনো কোন্দল যদি থেকে থাকে তবে স্থিতীশীলতা রক্ষায় জাবি ছাত্রলীগ যেকোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। জাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রলীগের হল কমিটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অতি শিগগরই হল কমিটি দেওয়া হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, জাকসু নির্বাচন বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু ২৭ জুন সকল ছাত্র সংগঠনের সাথে প্রশাসন মত বিনিময় করলেও ছাত্রদলকে আমন্ত্রণ না জানানোয় আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করছি। পরবর্তীতে সকল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মত বিনিময় কমিটি করলেও তা অকার্যকর এবং লোক দেখানো।

ছাত্রদল সভাপতি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ অস্ত্রের মাধ্যেমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে রেখেছে। জাবি ছাত্রদলের সকল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে এবং তারা একাধিকবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বর্তমান প্রশাসনকে তারা বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের জন্য দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে তিনি বলেন, হামলা-মামলার মাধ্যমে তাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে সুষ্ঠু এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং অতি দ্রুত জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানান।

জাকসু নির্বাচন নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অস্ত্রের ঝনঝনানি, দখলদারিত্বের মধ্যে তারা লড়াই করে টিকে আছেন। প্রশাসনের উচিত নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসকে অস্ত্রমুক্ত করা। হলের সিট বণ্টন প্রশাসন করে না, করে ছাত্রলীগ। প্রশাসনকে আগে হলের ওপর থেকে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব অপসারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য জাকসু প্রয়োজন এবং জাকসু নির্বাচনে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয় এজন্য প্রশাসনকে সবার আগে নিরপেক্ষ হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের স্বদিচ্ছা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি সম্ভব না। এজন্য প্রশসনকে সরকারের লেজুরবৃত্তির পথ পরিহার করে সাধারণ ছাত্রবান্ধব ক্যাম্পাস তৈরি করতে হবে।

সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কাছ থেকে কেমন আচরণ কাম্য এমন প্রশ্নের জবাবে সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, সরকারের হাত শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগ নিয়জিত। তবে তারা যেন অতীতের গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলো স্মরণ করে এবং দখলদারিত্বে রাজনীতির যেন পথ পরিহার করে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদ) সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ জাকসু নিয়ে বলেন, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে ছাত্রলীগ ছেলেদের প্রতিটি হলে এবং ক্যাম্পাসে যে দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে আগে তা থেকে নিষ্কৃতি প্রয়োজন। অন্যথায় জাকসু নির্বাচনের জন্য সহাবস্থান তৈরি হওয়ার ব্যাপারে তারা শঙ্কিত। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রতিশ্রুতি উপাচার্য দিয়েছেন তা বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করছি। ক্যাম্পাস থেকে অস্ত্রবাজি এবং শিক্ষকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে জাকসু নির্বাচন এর প্রকৃত লক্ষ অর্জনে ব্যর্থ হবে।

জাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এবং ফল জাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে আমদের উদ্বিগ্ন এবং স্বচ্ছতার ব্যাপারে সন্দিহান করে রেখেছে। তারপরেও আমরা আশাবাদী যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাষ্ট্রীয় লেজুড়বৃত্তি বাদ দিয়ে সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রশাসন তাদের এক চোখা নীতি থেকে সরে আসলেই কেবল সকল দলের সহাবস্থান তৈরি হতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে সকল দলের সহাবস্থান তৈরি সম্ভব হবে যদি প্রশাসন উদ্যোগী হয়। পরবর্তীতে সকল বৈধ ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীদের হলে অবস্থান ও তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ তৈরি করতে হবে।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের (জাবি) আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান বলেন, প্রশাসনকে কোনো দলের পক্ষ না নিয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে সকল ছাত্র সংগঠন প্রচারণা থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায়। পরিস্থিতি এবং সময়ই বলে দেবে আমরা এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেব নাকি জোটবদ্ধভাবে।

এ দিকে, জাবিতে বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন জল্পনা কল্পনা চলছে। প্রশাসন এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এ নিয়ে অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই মিছিল এবং আন্দোলন কার্যক্রম চলছে এই উন্নয়ন প্রকল্পকে পরিবেশবান্ধব এবং স্পষ্ট করার জন্য। জাকসু নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড