• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আবাসন সঙ্কটে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

  মো. শাহ্‌ নেওয়াজ, ঢাবি প্রতিনিধি

১৫ জুলাই ২০১৯, ১২:১৪
ঢাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও আবাসিক সুবিধা-ব্যবস্থার কারণেই ডাকা হয় এ নামে। ১৯২১ সালে ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে। শিক্ষার্থী বৃদ্ধির সঙ্গে আবাসন সুবিধা না বাড়ানোয় সময়ের স্রোতে দেশের সর্বোচ্চ এ শিক্ষায়তন তার সেই সুপরিসর আবাসনের চরিত্র হারিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো আজ হয়ে উঠেছে জনবহুল ও ঘিঞ্জি। দিন দিন বাড়ছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা, কিন্তু সে পরিমাণে বাড়ানো হচ্ছে না আবাসন ব্যবস্থার। ফলে, প্রতিটি হলে সৃষ্টি হচ্ছে আবাসন সংকট। ফলে আবাসিক হলগুলোতে জায়গা পাচ্ছে না নতুন শিক্ষার্থীরা। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম।

বিশেষ করে বিভিন্ন স্থান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। মেস কিংবা আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকাটা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় এসব পরিবারের সন্তানরা সংকটে পড়েছে। একটা সিটের জন্য বাধ্য হয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিকার হচ্ছে। সময়ে অসময়ে হলের নেতাদের নির্দেশে মিছিল মিটিংসহ দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া, আবাসন সংকটের কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে। এইগুলোও বাধা দিচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমের।

আবাসন সংকট নিয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এখন ২য় বর্ষে পড়ছি, হলের অবস্থা এখন এই যে একটা সিটও খালি নেই। যার ফলে আমরা এখনো সেই গণরুমেই আছি। কর্তৃপক্ষকে তা জানালে উনারা আমাদেরকে আশ্বাস দেন, কিন্তু এই আশ্বাসের বাস্তবায়ন এখনো দেখতে পাইনি। ফলে আমরা তীব্র আবাসন সংকটে ভুগছি। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের জন্য খুব বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী আরিফা শারমীন বলেন, হলে আবাসিক সিটের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু দেড় বছর হয়ে গেল, আমি হলে উঠতে পারছি না।

তিনি বলেন, হলে আবাসিক সংকটের কারণে পলাশী স্টাফ কোয়ার্টারে অন্যান্য বান্ধবীর সঙ্গে সাবলেটে থাকছি আমি। চার জন মিলে একটি রুম ভাড়া করে কোনো রকমে থাকি। নিরাপত্তার খুব একটা সমস্যা না হলেও বছরখানেক ধরে এই সাবলেট থাকা। তবে আবাসিক হলগুলোতে মেধায় আসার চেয়ে রাজনৈতিকভাবে উঠলে সিট বরাদ্দ হয় তাড়াতাড়ি। এ জন্য রাজনৈতিক একটা চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয় পুরোটা শিক্ষাজীবন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কবি জসিম উদ্দিন হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আসলে হলে আসন সংকটের মুল কারণ হলো অছাত্র ও বহিরাগত। অনেকের ছাত্রত্ব নেই, কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে তারা হলের সিট দখল করে বসে আছে। এছাড়াও তাদের ছত্র-ছায়ায় বসবাস করছে কিছু বহিরাগতও। এসব সমস্যাদি সমাধান করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা দূর হবে বলে আমি মনে করি।

বর্তমানে ঢাবির হলে আবাসনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একটা বড় ভূমিকা পালন করছে। যারা রাজনৈতিকভাবে যত ক্ষমতা সম্পন্ন তারাই সবার আগে হলে থাকার সুযোগ পায়, এক্ষেত্রে মেধার বা হল প্রশাসনের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, আসলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দলমতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। তাই বলে তারা কি হলের আবাসিক ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

আবাসন সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট বলেন, আমরা জানি আবাসন সমস্যা একটি বড় সমস্যা। এটা নিয়ে আমরা সবসময় চিন্তা করি। এই আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি রোকেয়া হলে ৭ মার্চ ভবন উদ্বোধন করা হলো। এতে আবাসন সমস্যা একটু হলেও কমেছে। বঙ্গবন্ধু হলেও ১০তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের কাজ চলছে এভাবে সব হলেই আবাসন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই ব্যাপারে ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রত্যেকটি হলের আবাসন সংকট দ্রুত সমাধান করা হবে। এসএম হলের শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এসএম হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বারান্দায় থাকত। তাদের সমস্যা সমাধানে আপাতত একটা টিনসেট ভবন নির্মাণ করার কাজ চলছে। এছাড়া আমি নিজে উপস্থিত থেকে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কক্ষে সিট বরাদ্দ দিয়েছি।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড