• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সাইকেল চালিয়ে ৬৪ জেলা পাড়ি দিলেন ঢাবির আতিক আশিক

  মো. শাহ্‌ নেওয়াজ, ঢাবি প্রতিনিধি

১৩ জুলাই ২০১৯, ১১:৪৪
ঢাবি
সাইকেল চালিয়ে ৬৪ জেলা পাড়ি দিলেন আতিক আশিক (ছবি : সংগৃহীত)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক আশিক। ভ্রমণ তৃষ্ণার্ত মনের পিপাসা মিটানোর জন্য বাইসাইকেল চালিয়ে পুরো ৬৪ জেলা ভ্রমণ করে দেখলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এই আবাসিক ছাত্র। স্ব-উদ্যোগে নিজস্ব অর্থায়নে বাইসাইকেল যোগে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা ভ্রমণ করতে তার সময় লেগেছিল মাত্র ৩৫ দিন।

২০১৮ সালে ময়মনসিংহ দিয়ে তার ভ্রমণ শুরু করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করে তার ভ্রমণের ডায়রিতে ৬৪ জেলা পূর্ণ করেন। তার ৬৪ জেলায় ভ্রমণের আদ্যোপান্ত উঠে এসেছে দৈনিক অধিকারের সঙ্গে আলাপে।

ভ্রমণের শুরুটা কীভাবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্ব প্রথম সাইকেল কিনেই ময়মনসিংহ দিয়ে শুরু করলাম আমার দেশ ভ্রমণ। এ সময় আমার বন্ধুরা ও শুভানুধ্যায়ীরা আমার এরকম আগ্রহের কথা শুনে সবাই আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে অবসরে ছুটিতে নাটোর, রাজশাহী ও বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। গেল বছর ফেব্রুয়ারিতে টুঙ্গিপাড়া-বরিশাল, ডিসেম্বরে রংপুর-পঞ্চগড়, এই বছর ফেব্রুয়ারিতে মুজিবনগর-খুলনা-ভোলা-নোয়াখালী-রাঙ্গামাটি-কক্সবাজার এবং সর্বশেষে নেত্রকোণা-সিলেট-মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ দিয়ে ৬৪ জেলার ভৌগলিক বৈচিত্র্যে সৌন্দর্য পিপাসু আমার ছোট দুই চোখ। ৩৫ দিনের মতো লেগেছে সব মিলে। রাত কাটিয়েছি সাধারণত বিভিন্ন আবাসিক হোটেলেই।

ছবি

সৃষ্টির মাঝে জীবনের গল্প খুঁজে ফিরছে আতিক আশিক (ছবি : সংগৃহীত)

কেন তার এই রকম উদ্যোগ তা জানতে চাইলে আতিক আশিক বলেন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে শুনি দেশে ৬৪ জেলা, আজ ঘুরে দেখলাম তার চেহারা, পড়লাম তার ইতিহাস, দেখলাম বাংলার কোথায় কী আছে। ভৌগলিক বৈচিত্র্য দেখার প্রবল উৎসাহে আমার সৌন্দর্য পিপাসু মন ছুটে বেড়িয়েছে জেলা থেকে জেলা। মধুপুর বনাঞ্চল পেরিয়ে উত্তরবঙ্গের শুষ্ক নদীর বুকে ধান চাষ যেমন দেখেছি, তেমনই দেখেছি দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর ভরা যৌবন, টইটম্বুর দুই তীরে সুন্দরী গেওয়া কেওড়া গোলপাতার রাজত্ব। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে কিংবা পাহাড়ের বুক চিরে এত উঁচুতে পিচ ঢালা রাস্তা দেখে যেমন বিস্মিত হতে হয় ঠিক তেমনি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি কৌশল চিন্তা করলে মাথা নত হয়। একদিকে পেরেক মেরে রেখেছেন অপরদিকে দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি যেন স্রষ্টার নামে আন্দোলিত হচ্ছে। সৃষ্টির মাঝে জীবনের গল্প খুঁজে ফিরেছি, তাই ৬৪ জেলার রূপ সুধা পান করতে নিজের সাইকেল নিয়ে ভৌগলিক বৈচিত্র্যের পথে নেমেছি। মোটরসাইকেল যেহেতু নেই তাই খরচ বিবেচনায় সাইকেল নিয়েই নেমে পড়েছি। ৬৪ জেলার হাজারো অভিজ্ঞতা আমার ঔপন্যাসিক মানসিকতাকে সমৃদ্ধ করেছে।

তিনি আরও বলেন, এই স্বপ্নের ভ্রমণের পথ চলা দেখে সাধুবাদ জানায় আমার বন্ধুবান্ধব ও প্রিয় মানুষগুলো। মোবাইলে ছবি তোলে আর হাত নেড়ে উৎসাহ যোগায় পথচারীরা। সাবাস বাঙালি এগিয়ে যাও বলে ধন্য হোক দেশ তোমাদের মতো গর্বিত সন্তানদের জন্য।

৬৪ জেলা ভ্রমণের সময় তার সবচেয়ে স্মরণীয় দিন সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাবির আইইআর বিভাগের ইবনে বতুতা খ্যাত আতিক আশিক বলেন, ৬৪ জেলার পথে আমার সবচেয়ে স্মরণীয় দিনটি ছিল রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই লেক ধরে পাহাড়ের পর পাহাড় টপকিয়ে বান্দরবান যাওয়া। সেদিন সুন্দরে আমি মরে গিয়েছিলাম। মেরিন ড্রাইভ রোডের মতোই একপাশে নীল জলরাশি, অপর পাশে বিস্তৃত পাহাড় চূড়ায় মেঘের ছড়াছড়ি। মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলাম সৌন্দর্য দেখে। সাইকেলের কন্ট্রোল হারিয়ে পড়েছিলাম পাহাড় ছিটকে। আর এটিই ছিল আমার ভ্রমণের স্মরণীয় দিন।

ছবি

প্রাকৃতিক সুন্দরময়, মমতাময় সোনার বাংলাদেশ (ছবি : সংগৃহীত)

সবশেষে আমি একটা কথাই বলতে চাই, সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে সৌভাগ্য যে সারা দেশ ঘুরেছি স্বাধীন পরিবেশে। সাইকেল চালিয়ে দেখেছি সারা দেশ, মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে। প্রাকৃতিক সুন্দরময় মমতাময় মানুষের সোনার বাংলাদেশ। সমতল বেশি জেলা, কত জেলা নদী নালা, পর্বত কয়েক জেলা। কৃতজ্ঞ আমি সকল স্তরের মানুষের কাছে, পাশে ছিল সংবাদকর্মী, মুগ্ধ হয়েছি তাদের কাছে পেয়ে।

রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আতিক আশিক। তিনি ২০১৪ সালে বিলমাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০১৬ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হয়ে বর্তমানে আইইআর বিভাগে ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় আছেন।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড