• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইবির গবেষণা খাতের বাজেটও নগণ্য!

  ক্যাম্পাস ডেস্ক

০২ জুলাই ২০১৯, ১৯:১৫
ইবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০১৯-২০ অর্থ বছরের (মূল অনুন্নয় বাজেট) জন্য ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। এই বাজেটে গবেষণা খাতে মোট বাজেটের ০.৫৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতের বর্তমান অবস্থার মত এ বাজেটও নগণ্য!

গত ২৯ জুন (শনিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪৫ তম সিন্ডিকেট সভায় নতুন অর্থ বছরের বাজেট অনুমোদন হয়। যেখানে মোট বাজেটের ৭৮.৭৩ শতাংশ খরচ হবে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও পেনশন বাবদ। অন্যদিকে গবেষণা খাতে ০.৫৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই স্বল্প বাজেটে একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায় কখনো বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত হতে পারেনা, বলছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এবারের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট বরাদ্দের প্রায় চার-পঞ্চমাংশই শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং অবসরকালীন ভাতা বাবদে ব্যয় হচ্ছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন অর্থাৎ গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে খুবই সামান্য পরিমাণ অর্থ।

অর্থ ও হিসাব অফিস সূত্রে, নতুন অর্থ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) ২৪৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা অনুমোদন দেয় তারা। এর মধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাবদ ৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর তাদের পেনশন ও অবসরকালীন ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে আরও ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার মোট বাজেটের মধ্যে শিক্ষকসহ অন্যান্যদের বেতন-ভাতা-পেনশন বাবদ খরচ হবে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ৭৮.৭৩ শতাংশ।

অন্যদিকে নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন তথা গবেষণা খাতে আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৮০ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ০.৫৮ শতাংশ। যদিও এখাতে বরাদ্দ চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

গবেষণায় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই নাজুক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে গবেষণার আগ্রহ নেই বললেই চলে। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় ব্যয় বরাদ্দ খুবই নগণ্য হওয়া, বিভাগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গবেষণায় আর্থিক সহযোগিতা না করা, গবেষণা বরাদ্দের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা সহ নানান জটিলতা।

গবেষণা ও এ খাতে ব্যয় বরাদ্দের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এতো কম বরাদ্দে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনো গবেষণায় উন্নতি লাভ করতে পারে না। আবার আন্তর্জাতিক মানের হওয়াটাও খুবই হাস্যকর বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ফান্ড একেবারে নেই বললেই চলে। যাদের ভালো গবেষণার আগ্রহ আছে তারাও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। দেশের বাইরে পেপার প্রেজেন্ট করতে হলে নিজের পকেট থেকে টাকা গুনে যেতে হয়। আবার যে সামান্য টাকা গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার সিংহভাগ অন্য খাতে ব্যয় করা হয়।’

এদিকে ইউজিসি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৩৭ কোটি লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও এর মধ্যে ১৩ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ আয় করতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। এই ১৩ কোটি টাকার সিংহভাগ আসবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। অথচ সেই শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। প্রতি সেশনে ভালো রেজাল্ট ধারী প্রথম ৭ জনকে দেয়া হয় এই মেধা বৃত্তি। যার পরিমাণ খুবই নগণ্য, মাসে মাত্র ১২০টাকা। গত দুই যুগ ধরেই এটি চলে আসছে।

আইন বিভাগের এক মেধাবী শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই যুগ আগে বছরে ১ হাজার ৪৪০ টাকা হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু এখন তিনগুণ ভর্তি ফি বাড়ানোর পরও তা একই থাকা মোটেও কাম্য নয়। প্রশাসনের উচিত সময় ও চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে একজন ভালো রেজাল্ট ধারী শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন করা।’

এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘাটতি প্রতি বছর বেড়েই চলছে। গত ২৩ অর্থ বছরে ঘাটতি বাজেট দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে ইউজিসির অনুমোদন বিহীন ১২৩ কর্মকর্তার বেতন-ভাতা বাবদই ২৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অন্যান্য খাতে ৩৯ কোটি টাকা।

সম্প্রতি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে ওই ১২৩ কর্মকর্তাকে বৈধতা দেওয়ায় চলতি অর্থবছর থেকে বাজেট ঘাটতি কিছুটা স্থিতি থাকবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষক মো. সিদ্দীক উল্লাহ।

বাজেটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা বলেন, ‘আমাদের চাহিদার তুলনায় কম বাজেট বরাদ্দ পেয়েছি। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিটি খাতে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘গবেষণা খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সকল উপাচার্যের সঙ্গে এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি আমারও। আর মেধা বৃত্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

ঘাটতি বাজেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১২৩ জন কর্মকর্তা ইউজিসি থেকে বৈধতা পাওয়ায় বাজেট ঘাটতির লাগাম কিছুটা টানা সম্ভব হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের জন্য থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা কিছুটা স্বস্তির বিষয়।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড