রাজু আহমেদ, রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সদরে শাহদৌল্লা কলেজ সরকারি হওয়ার পর এ বছরই প্রথম এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ভর্তি শুরু হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্রে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা ভর্তি ফির কথা বলা হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা মানছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিপত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে, দরিদ্র-মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেই ফি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবেচনা সাপেক্ষে মওকুফের সুযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে যেকোনো কলেজের জন্য সেশন-চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিপত্রটি বাঘা উপজেলার সকল কলেজ অনুসরণ করলেও উপজেলা সদরের শাহদৌল্লা সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ তা অমান্য করেছে। এখানে ভর্তির সময় অনলাইনে ১৯৫ টাকা ব্যাংক ড্রাফ করার পর নতুন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ ২৩টি খাতে বাৎসরিক দুই হাজার ১৫৬ টাকা আদায় দেখিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, কলেজটির কর্তৃপক্ষ ভর্তির শেষ তারিখ ৩০ জুন পর্যন্ত ২৩টি খাতে ৫৩৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে। এর বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুই হাজার ১৫৬ টাকা আদায় করে। সেই হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা আদায় করেছে। বিষয়টি জানাজানি হবার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে স্থানীয় অভিভাবকরা।
অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের হিসেবে দেখানো হয়েছে, অনলাইনের বাইরে দ্বিতীয় দফা ভর্তি ফি ২০ টাকা, এক বছরের বেতন ২৪০ টাকা, অধিভুক্তি ফি ২৫ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ফি ২০ টাকা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ফি ৫০ টাকা, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া ও কমনরুম ফি ৪০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ৩০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৭০ টাকা, রোভার স্কাউট ফি ৪০ টাকা, রেড ক্রিসেন্ট ফি ২০ টাকা, গ্রন্থাগার ফি ২৫ টাকা, গবেষণাগার ফি ১০০ টাকা, কল্যাণ ও দারিদ্র তহবিল ফি ২০ টাকা, চিকিৎসা সেবা ২০ টাকা, আইসিটি ২০ টাকা, বিজ্ঞান ক্লাব ফি ১০ টাকা, সাইকেল গ্যারেজ ১০ টাকা, ব্যবস্থাপনা ফি ১০০ টাকা, অত্যাবশ্যকীয় ফি (কর্মচারী) ৪০০ টাকা, কলেজ উন্নয়ন ফি ১০০ টাকা, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ফি ৫৬০ টাকা এছাড়াও বিবিধ ১০০ টাকা এবং ডি-এলার্ট ফি ৯৬ টাকা।
বাঘা সদরের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, একটি সরকারি কলেজ উন্নয়নে সরকার যথেষ্ট অর্থ প্রদান করে থাকে, এখানে কলেজ উন্নয়ন ফি বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট ১০০ টাকা নেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। অনুরূপ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যেখানে সরকারি স্কেলে কর্মচারীরা বেতন পান সেখানে অত্যাবশ্যকীয় ফি (কর্মচারী) খাতেও ৪০০ টাকা নেওয়ার দরকার পড়ে না। অনুরূপভাবে ম্যাগাজিন ৩০ টাকা এবং চিকিৎসা খাতে ২০ টাকাসহ এক বছরের অগ্রিম বেতন ২৪০ এবং অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ফি ৫৬০ টাকা এককালীন নেওয়াও সম্পূর্ণ বেআইনি ও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি বাড়তি বোঝা। এ সময় তিনি সরকারি পরিপত্র অমান্য করে এভাবে অগ্রিম টাকা নেওয়াটা সম্পূর্ণ আপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, একটি সরকারি কলেজে সরকারি নিয়মের বাইরে ভর্তি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ ২৩টি খাত উল্লেখ করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট যে অর্থ আদায় করেছে এ অর্থের একটি টাকাও সরকারের কোনো উন্নয়ন খাতে জমা হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্রের বাইরে অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তা কারো একার সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়নি। কলেজের সাত সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটি আলোচনা সাপেক্ষে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রপ্রতি এ অর্থ উত্তোলন করেছে।
তবে এই অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন কলেজ পরিচালনা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা। তার মতে, এ অর্থ ব্যাংকে জমা হলে তার যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া উত্তোলন করা যাবে না। তবে এখন পর্যন্ত ওই টাকা আদৌও ব্যাংকে জমা হয়েছে কী না, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড