ইবি প্রতিনিধি
আমরা ছাত্রনেতা, আমরা নিয়োগ বাণিজ্য করতেই পারি, শিক্ষকরা কেন করবে? দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য বিরোধী মিছিল করে, দুর্নীতিবাজদের বিচার চাইতে গিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে উত্তপ্ত কণ্ঠে এসব কথা বলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম। সঙ্গে সঙ্গে এ কথার প্রতিবাদ করেন উপাচার্য ড. রাশিদ আসকারি।
শনিবার (২৯ জুন) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ তাদের টেন্ট থেকে দুর্নীতিবাজ ও নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবিতে মিছিল বের করে। এ সময় তারা নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে অনুষদ ভবন করিডোরে গিয়ে শেষ হয়। এরপর বিচারের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে তারা উপাচার্যের কার্যালয়ে যান এবং তাদের দাবি সমূহ তুলে ধরেন।
ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত মূল হোতাসহ সকলের শাস্তির দাবি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্যে যারা জড়িত এবং যারা এর মূলহোতা তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’ এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা বিচার চাই, বিচার চাই, মূল হোতার বিচার চাই ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ইবি শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা ছাত্রনেতা, আমরা নিয়োগ বাণিজ্য করতেই পারি, শিক্ষকরা কেন করবে?’
এর জবাবে সঙ্গে সঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ‘তোমরা নিয়োগ বাণিজ্য করতেই পারো, তা আমি মানলাম না।’
পরে হালিম বলেন, ‘আপনারাই তো বলেছেন স্যার! আমি এটা বললাম কোন পারপাসে! আপনারাই বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে সমস্ত শিক্ষক আমরাই নিয়োগ দিয়েছি।’ পাশে আরেক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই যখন জড়িত থাকে, তখন স্টুডেন্টরা কী করবে?’
ছাত্রলীগ কর্মীরা বলেন, ‘পত্রিকায় নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের নাম প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে মাত্র দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, মূল হোতাদের নাম প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও বহিষ্কৃত করা হয়নি, বরখাস্ত করতে হবে।’
এ সময় উপাচার্য বলেন, ‘মূলহোতা যেই হউকনা কেন, যেই জড়িত থাকুক না কেন, তদন্ত সাপেক্ষে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি আমি দিলাম।’
এ সময় হালিম বলেন, ‘ঠিক আছে, সেটা আমরা দ্রুত চাই। তদন্ত কমিটি হবে, বছরের বছর চলে যাবে, এটা যেন না হয়।’
এক পর্যায়ে ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে, সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘আপনি শোভন ভাইয়ের কাছে আমাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ করেছেন সেই জন্য ইবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।’
সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম বলেন, ‘যতবার আমরা কমিটির বিষয়ে কথা বলছি ততবার আপনার (উপাচার্য) নাম উঠে আসছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমি এটি অস্বীকার করি। আমি কখনো এখানে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ে ডিল করিনি এখনো করি না। ছাত্রলীগের কমিটিতে কে বা কারা আসবে সম্পূর্ণ কেন্দ্রের ব্যাপার।’
শাহিন বলেন, ‘আপনি আমাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শোভন ভাই বলেছে।’ উপাচার্য উত্তরে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগটা আমাকে দেখাও এনে।’
তখন শাহিন বলেন, ‘তাহলে শোভন ভাইকে বলতে হবে।’ উপাচার্য বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি আমাকে লিখিত অভিযোগ দেখাতে পারবে না। তখন হালিম শাহীন বলেন, ‘এটা তাহলে পরে বলবনি, স্যার।’ উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘যদি প্রুভ না হয়, তখন কি করবা?’ হালিম বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্টের (শোভন) কাছে গিয়ে ফোন ধরাই দেব আপনাকে। আপনি বারবার, একাধিকবার...’ উপাচার্য বলেন, তুমি যে লিখিত বললা? হালিম, সেই জিনিসটাই আমরা চাইবো। এরপর উপাচার্য বলেন, ‘তুমি যে লিখিত বললা...। যদি প্রমাণ করতে না পারো...’ হালিম, তারা আমাদের বলেছে যে, তোমাদের প্রশাসন আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে...। উপাচার্য, আপনি, শুধু দেখান লিখিত, মৌখিক ভাবে বলে থাকলে মৌখিক প্রমাণ দেখান। হালিম ও শাহিন : এটা আমাদের কথা না, এটা তো আমাদের কোনো হিসাব নাই। স্যার, আমরা এখন পর্যন্ত আপনাকে নিয়ে কোন কথা বলিনি। উপাচার্য : লিখিত কেন, মৌখিক ভাবেই আমি এ ব্যাপারে বলিনি। শাহিন: তাহলে তারা কেন বলছে? এর পিছনে কারণ কি? উপাচার্য : তারা কেন বলছে, এ ব্যাপারে তো আমি দায়বদ্ধ না।
এ দিকে, ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবরে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের পর থেকে হাতেগোনা কয়েকদিন ছাড়া তাদের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। এমনকি শুক্রবার বিকালে সভাপতির কর্মীদের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে এতে নূর আলম আহত হয়ে মেডিকেলে চিকিৎসা নেন।
এ বিষয়ে সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিটির কার্যক্রম স্থগিত। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
আগের দিন মারামারির ঘটনায় কমিটি স্থগিতের কথা বলে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। তবে শনিবার হঠাৎ নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন।
এর আগে সকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে এক প্রার্থীকে চাকরি নিয়ে দেয়ার যে অডিও ফাঁস হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আজকে সিন্ডিকেটে এ ঘটনা কেন ঘটেছে ও এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না এ বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিবেদন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ, কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শাস্তির এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, যাতে পরবর্তীতে এ জাতীয় কাজ করার সাহস কেউ না দেখায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। তাই, এর সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘শুধু ঘুষ গ্রহিতা নয়, যে ঘুষ দেয় তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড