• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে বাকৃবি বোটানিক্যাল গার্ডেন

  মো. শাহীন সরদার, বাকৃবি প্রতিনিধি

১১ জুন ২০১৯, ১১:২৩
বাকৃবি
দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের বিরল সংগ্রহশালা বাকৃবি বোটানিক্যাল গার্ডেন (ছবি : সংগৃহীত))

ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে এবং ময়মনসিংহ শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে সবুজে পরিবেষ্টিত নিরিবিলি স্থানের নাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। প্রকৃতি কন্যা খ্যাত বারশো একরের ক্যাম্পাসটি সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। পুরো ক্যাম্পাসটি যেন ছবির মতো সুন্দর। যে কাউকেই বিমোহিত করবে। শহুরে যান্ত্রিকতা ও কোলাহল হতে একটু প্রশান্তির খোঁজে আসতে পারেন এই সবুজ চত্বরে। সবুজ চত্বরে ফুল-ফল ও সবুজের সমারোহের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে কৃষি জাদুঘর, মাছের জাদুঘর ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। এছাড়া বিশ্বখ্যাত জার্মপ্লাজম সেন্টার, রেল লাইন ও ব্রহ্মপুত্রের কলধ্বনিও পাবেন এখানে।

বোটানিক্যাল গার্ডেনের আদোপান্ত জানাচ্ছেন দৈনিক অধিকারের বাকৃবি প্রতিনিধি শাহীন সরদার।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়েই বাকৃবি চত্বর। নদের পাড়ের এক অংশে ২৫ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের বিরল সংগ্রহশালা বোটানিক্যাল গার্ডেন। প্রতিদিনই এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত লোক বেড়াতে আসে। এটি দর্শনাথী, শিক্ষার্থী ও গবেষক সকলকেই বিমোহিত করে আলাদা আলাদাভাবে।

এই গার্ডেনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বোটানিক গার্ডেনস কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল (বিজিসিআই) স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেন। ১৯৬৩ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ওসমান গণির সময়ে প্রতিষ্টা লাভ করে গার্ডেনটি। গার্ডেনটি বর্তমানে ২৫ একর জায়গা নিয়ে এবং ৩০টি অঞ্চলে বিভক্ত। এখানে দেশী প্রায় সকল উদ্ভিদেও প্রজাতি রয়েছে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশী বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের সংগ্রহশালা এ বোটানিক্যাল গার্ডেন। এ গার্ডেনে রয়েছে প্রায় ১০০০টি বড়, ১২৭৮ টি মাঝারি ও ৪৪৬৭টি ছোট গাছ সহ প্রায় ৬০০ প্রজাতির উদ্ভিদ।

ছবি

গোল্ডেন সাওয়ার (ছবি : সংগৃহীত)

১৯৮৮ সালে এ গার্ডেনের কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসরে গেছেন। গার্ডেন গড়ে তুলার অন্যতম কারিগর তিনি। ১৯৯০ সালে কিউরেটর দ্বায়িত্ব শেষ হলেও বোটানিক্যাল গাডের্নের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। গার্ডেনকে সমৃদ্ধ করতে গিয়েছেন দেশের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে এমনকি বিদেশে। কথা হয় তার সাথে কী কী উদ্ভিদ রয়েছে এ গার্ডেনে জানতে চাইলে টানা মুখস্ত বলে যান কোথা থেকে কিভাবে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদগুলো সংগ্রহ করলেন তিনি।

তিনি বলেন, গার্ডেনে রয়েছে কামরাঙা, জাম, জামরুল, অশোক, পেয়ারা, বিলিম্বি, লটকন, ডেওয়া, ডেইপাল, গুটগুটিয়া, অর্জন, আমলকি, হরতকিব,আফ্রিকান টিউলিপ, কাইজেলিয়া, স্বর্ণঅশোক, কুম্ভি, নাগেশ্বরচাপা, বুধানারিকেল, পাটেনজাবা, কাঠবাদাম, তমাল সুলতানচাপা, জংলী বাদাম, বানভেনডি, বুধানারিকেল মহুয়া, বকুল, হিজল, পলাশ, কদম, তানপুরা, অর্জুন, বহেরা, আমলকি, পাহাড়ি কাশ, হিজল, বরুণ, কদম, কাইকা, সিন্দুরি, বিক্সা চান্দুল, কনকচাাঁপা, স্বর্ণাচাপা, আজুলি, দেশি ডাব, ড্যাডমারডন, জইনা, মাহুয়া, কারপুর, তেজবাল, কুরচি, শিমুল, জাচুইনা, কন্ঠলতা, গুইয়াবাবলা, মেলা লিউকার, সিডা মেডুলী, ইশরমূল, রামবুতুম, তইকর, কুমারিলতা, তরকি লাউ, কাকড়া, কফি, ঘা আলু, বুলগুজারি, সাদা পদ্ম, উরমই, পদ্মাগুলঞ্চা, ডেওরা, হারগুজা কান্টা, হুগলা, মটরকড়ই, এপিকাক, কালাহুজা, প্যাশন ফ্রুট, ডেরিস, কালোমেঘ, মিছরিদানা, নিলকান্ত, শতমূলী, স্বর্পগন্ধা, তালমুলি, হানি সাকল, বানকলা, হলুদ পলাশ, হলুদ কাঞ্চন, শম্ভুকাস, পিচ, অনন্ত লতা, খামি, কুলানজান, কানথাকাশ, সুলতানচাপা, কাইকা, সিধা, কানসুনালু, লেতকানথা, পাটিপাটা, নাক্সভোমিকা, নদাজাম, তিথিজাম, আজুলি, শাল, আমরাগুতা, খারাজুরা, আরুসা, পানিকলমি, খুসখের, এলেনা, চাগাল্লাদি, মোথা, আভুকাদো, ডুরিয়ান, কোকুয়া, সাতকরা, অ্যাভুকডা, বরমালা, মেইলাম, ছাগল-লাদি, স্বর্ণ অশোক, রাজ অশোক, ব্রানফেলসিয়া, আফ্রিকান টিউলিপ, অ্যামাজান লিলি. ক্যাকটাস, লালচিতা, নিলচিতা, গালমরিচ, কচুরিপানা, মাসুকদা, গানিয়ারি, গ্রিলিরিচিডা, ফার্ন হরিণসিংঙ্গা, অশোক, আতমরা, পাদুক, বেরিয়া, বেহেলাতদ, ফার্ন কড়ই, গার্ডেনিয়া, ঝাল কচু, লাল ঝুমকা, কপূর, ব্যামবুস, টিটপাই, রনডেলিটিয়া, টাবেবুইয়া, সুগার পাম্প, ডুমবিয়া, গারিয়া বেত, বনজারি, জয়ত্রী, জয়পাল, নাগনাথ, জাচারান্দা, বন্য খেজুর, স্কাফেলারা, রাভেনিয়া, জাকুটিভাসা, ভেরিগেটেট বকুল, ভেরিগেটেট মন্ডার, পারসিমন, পিচ, নাগমনি, কাকড়া, বাইন, হারগুজা কান্তা, হেনতাল, টাইগার ফার্ন, খালসিসহ প্রভৃতি উদ্ভিদরাজি।

এখানে প্রতিটি গোত্রের জন্য আলাদা আলাদা অঞ্চলে উদ্ভিদগুলোকে সাজানো হয়েছে। ক্যাকটাস, অর্কিড, পাম, সাইকাস, মসলা, টিম্বার, বাঁশ, মরুভূমি, পাথুরে অঞ্চলের উদ্ভিদ, সুন্দরবন অঞ্চলের উদ্ভিদ, বনজ উদ্ভিদ, ঔষধি উদ্ভিদ এমন প্রভৃতি নামে আলাদা আলাদা অঞ্চলে একই জাতীয় উদ্ভিদকে রেখে বাগানটিকে সাজানে হয়েছে। প্রায় প্রতিটি উদ্ভিদের গায়ে তার পরিচিতসহ কাগজ ঝুলানো রয়েছে।

ছবি

হলুদ পলাশ (ছবি : সংগৃহীত)

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে দুই বছরের জন্য একজন গার্ডেনের কিউরেটরের দায়িত্ব পান। তার তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হয় বাগানটি। এছাড়াও এখানে রয়েছে দুইজন বাগান তত্ত্বাবধায়ক প্রায় ৩০ জনের মতো কর্মচারী ও এক জন মালি। বাগানে মধ্যে রয়েছে একটি অফিস কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা। স্নাতক পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থী, মাস্টাস ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয় এটি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল থেকেও শিক্ষার্থীরা উদ্ভিদজগত সম্পর্কে জানতে এখানে আসেন।

উদ্ভিদরাজির পাশাপাশি বাগানটিতে দর্শনার্থীদেও জন্য রয়েছে বিভিন্ন পশু-পাখির প্রতিকৃতি। বিশ্রামের জন্য নদেও পাড় ঘেষে রয়েছে ৪০টির অধিক বিশ্রাম বেঞ্চ।

বাকৃবি শিক্ষার্থীদের জন্য বাগানটিতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। বহিরাগত দর্শনার্থীদের গেইট থেকে প্রবেশ কুপন সংগ্রহ করে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। বাগানটি সপ্তাহের রবি থেকে বৃহস্পতিবার পাঁচ দিন বিকাল ২টা থেকে ৫টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড