সাদিকুর রহমান, হাবিপ্রবি
ঈদ মানে আনন্দ। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা আপনজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে থাকেন। মুসলমানগণ ঈদের কয়েকটি দিন পরিবারের সঙ্গে অতিবাহিত করেন; বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করে এক সঙ্গে বসে খাবার খান, গল্প করেন।
আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য অফিসের কাজের চাপ সামলে, বাস-ট্রেনের টিকিটের ভোগান্তি শেষে, যাত্রা-যুদ্ধ সহ্য করে বাড়িতে পোঁছেন সবাই। উদ্দেশ্য ঈদ আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। যারা আপনজনদের কাছ থেকে দূরে থেকে ঈদ উদযাপন করেন তারা এক প্রকার মানসিক কষ্টে ভোগেন।
লেখাপড়ার জন্য উঠতি বয়সে বাবা-মা থেকে দূরে থাকা কতটা কঠিন! মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হওয়া কতটা বেদনার! মায়ের মুখ থেকে ‘খোকা’ ডাক কতটা ভালোবাসার-তা শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারে যারা বাবা-মা থেকে দূরে থাকেন। ঈদের দিনে এ বেদনা আরও বেশি অনুভূত হয় যখন বাবা-মার সঙ্গে সমবয়সী বন্ধুদের ঈদ উদযাপন করতে দেখি।
উত্তরের জেলা দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অবস্থান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন।
ঈদে ছুটি পেয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যান । গুটি কয়েক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপন করেন। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ হতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্যাম্পাসে তিনবার-দুইবার ঈদ-উল-ফিতর এবং একবার ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করেছেন।
তিনি জানান, ‘ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপন করলে বাবা-মার কথা খুব মনে পড়ে । মূলত লেখাপড়ার জন্যই আমি ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপন করেছি।’
ঈদের সময় ক্যাম্পাস পুরোপুরি ফাঁকা থাকে। সারা বছরের ব্যস্ত ক্যাম্পাস ছুটির সময় যেন বিশ্রাম নেয়। ঈদুল আযহা উদযাপনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ঈদুল আযহার সময় বাবা-মা বাড়ি থেকে কুরবানির গোশত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সে গোশত সোমালিয়ার মুসলমান বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে খেয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপন করেন। বিদেশি মুসলমান শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ নাইজেরিয়া ও সোমালিয়ার অধিবাসী। মূলত তারা ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে ঈদে বাড়িতে যেতে পারেন না।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে আড়াই শতাধিক বিদেশী শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন। যদিও তারা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর।
উদ্ভিদের রোগতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র মুখতার ওসমান, এসেছেন সোমালিয়া থেকে; আধো-বাংলায় তিনি বলছিলেন, ‘আমরা বিভিন্ন উৎসবে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুসরণ করি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার- আঞ্জেরো (পাতলা রুটি), উটের মাংস, খাসির মাংস, মুফো (দুধ ও ডিম মিশ্রিত পরোটা), পপকর্ণ, স্যুপ (খাসির মাংস দিয়ে তৈরি) ইত্যাদি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ম্যাকওয়েস (লুঙ্গি), কোফি (টুপি), শাল ইত্যাদি।’
মাৎস্য বিজ্ঞানের ছাত্র মেহেদী হাসান, তিনি নাইজেরিয়ার নাগরিক। মেহেদী হাসান জানান, ‘ঈদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাদেরকে দাওয়াত করেন। দাওয়াতে বাংলাদেশি খাবার-বিভিন্ন ধরনের সেমাই, তেহারি ও সালাদ পরিবেশন করা হয় । ঈদের দিন উপাচার্য আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। উপাচার্য আমাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন এ বিষয়টি আমাদের ভালো লাগে।’
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড