• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম বৎসরে পদার্পণ আজ 

  আহমেদ ইউসুফ, কুবি প্রতিনিধি

২৮ মে ২০১৯, ০৯:২৩
কুবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

২০০৬ সালের ২৮ মে, দেশের ২৬তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ ১৪তম বর্ষে পদার্পণ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। কিন্তু প্রতিষ্ঠার তেরোটি বছর পেরিয়ে গেলেও আজও একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাতে পারেনি দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের এ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।

প্রতিনিয়তই শিক্ষকদের গ্রুপিং, প্রতিহিংসামূলক মনোভাব, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অবনতি, ছাত্র রাজনীতির নোংরা গ্রুপিং, পদ নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি লেগেই আছে এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে রাজনীতিতেই ভবিষ্যত দেখে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এমনকি ছাত্র রাজনীতিতে শিক্ষকদের প্রভাব রয়েছে বলে জানায় তারা।

প্রতিষ্ঠার পরবর্তী এক বছর পরে মাত্র সাতটি বিভাগে ৩০০ জন শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে শুরু হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। বর্তমানে এ বিদ্যাপীঠে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছে বিভিন্ন বিভাগের আটটি ব্যাচ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১৪তম বছরে এসেও নানা সমস্যা আর অপূর্ণতায় আবদ্ধ।

গেল বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প পাস হলেও তা কবে নাগাদ শুরু ও শেষ হবে সেটাও শঙ্কা রয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেশন জট, শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, অব্যবস্থাপনা, সুপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের অভাব, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসিক ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা, জিমনেসিয়ামের অভাব, ভঙ্গুর চিকিৎসা সেবা, গ্রন্থাগার অব্যবস্থাপনা, হলগুলো ও ক্যাফটেরিয়ার খাবারের নিম্নমান, গবেষণায় যৎসামান্য বরাদ্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সড়কের অভাব, পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থার অভাব, তথ্যপ্রযুক্তিতে অনগ্রসরতা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাব, রাজনীতি ও ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাসে সরব রাজনীতির প্রভাব, বিভিন্ন সময় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো খালি অথবা ভারপ্রাপ্তদের ভারে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠা, অনিয়ন্ত্রিত মাদকের আগ্রাসনসহ নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বরাবরই ব্যাহত হচ্ছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ছয় জন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান গত বছরের ৩১ জানুয়ারি। বিশ্ববিদ্যালয়টির চলমান শিক্ষক রাজনীতির প্রভাবে বিগত কোনো উপাচার্যই সসম্মানে বিদায় নিতে পারেননি। মেয়াদ শেষ করতে পারেনি অনেকেই।

নিয়োগে দলীয়করণ ও পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ : পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে নেওয়া হয় লোক দেখানো লিখিত পরীক্ষা। এক পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার থেকে নিচের পদে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ব্যাচ স্নাতকোত্তর শেষ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক হয়েছেন ১৬ জন। শুধু ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত হয়েছেন ১৯ শিক্ষার্থী (৫ জন শিক্ষক)।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসিক ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থা : বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১০ জনেরও অধিক শিক্ষকদের জন্য শিক্ষক ডরমেটরি রয়েছে একটি। যেখানে মাত্র ২০-২৫ জন শিক্ষকের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। আর কর্মকর্তা মাত্র ৬-১০ জন। আবার এ ডরমেটরির অবস্থাও একেবারে নাজেহাল। নতুন একটি ডরমেটরির কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। এদিকে, প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল রয়েছে মাত্র চারটি। যেখানে সর্বসাকুল্যে ৯০০-১০০০ জন শিক্ষার্থীর আবাসিক সমস্যা সমাধান হতে পারে। হলের ডাইনিংগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই কোনো ভর্তুকি।

শিক্ষক সংকট ও সেশনজটে অধিকাংশ বিভাগ : বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কয়েকটি বিভাগে সেশনজট লেগেই আছে। তার মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, ফার্মেসী, নৃবিজ্ঞান, প্রত্মতত্ত্ব, সিএসই, আইসিটি বিভাগগুলোতে সেশনজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুমের স্বল্পতা, শিক্ষকদের উদাসীনতা প্রভৃতি কারণে বিভাগগুলো সেশনজটের কবলে পড়ছে বলে শিক্ষার্থীদেও দাবি।

১৩ বছরে দেখা মেলেনি সমাবর্তনের : বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আটটি ব্যাচ স্নাতক শেষ করলেও এখনও আয়োজন করা হয়নি কোনো সমাবর্তনের। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে যে এ বছরের শেষ নাগাদ না হলেও আগামী বছরের প্রথমেই সমাবর্তনের আয়োজন করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে আমাদের মানসিকতা প্রয়োজন। আর সংকট শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় পুরো বাংলাদেশেই একই অবস্থা। মেগা প্রকল্পের অর্থ আসলেই প্রধান ফটক করার চিন্তাভাবনা আছে এবং তা এ বছরেই হবে। সবার অংশগ্রহণেই এগিয়ে যাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।’

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড