গ্রীষ্মের বাহারি ফুলে রঙিন চবি ক্যাম্পাস

প্রকৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন জীবনযাত্রা প্রায় স্থবির, ঠিক সে সময় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সবকিছু ওলট পালট করে দিতে ছাড়ে হুঙ্কার, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় এ যাত্রায় রেহাই পায় প্রাণের মাতৃভূমি। তবে এত ভয়ঙ্কর হয়ে আসা ‘ফণী’ কী আর খুব সহজে ছাড়ে! তাইতো হালকা একটু ইঙ্গিত দিয়ে যায় তার শক্তিমত্তার। ফলে প্রায় দুই তিনদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সূর্যালোক পড়ে কম।

ঝিরিঝিরি বাতাস আর আকাশের অভিমান করে গোমড়ামুখে বসে থাকার সঙ্গে থেমে থেমে ছিল বৃষ্টিও। আর সেই বৃষ্টিই যেন নতুন করে জোয়ার আনল আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ ২১শ একরের চির সবুজ ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। শীত এসে যখন সবুজ গাছগুলো করে গেল সবুজ শূন্য। সেই ঝরা গাছে প্রাণ ফিরিয়ে আনল বসন্ত। আর সেই প্রাণে যেন নতুন করে যৌবন সঞ্চার করল এই গ্রীষ্মের ফণীর বৃষ্টি।

ক্যাম্পাসে ফোটা দৃষ্টিনন্দন সোনালু (ছবি : অনিক গোমস্তা)

দুই দিনের থেমে থেমে মৃদুমন্দ বৃষ্টিতে নতুন কুঁড়ি নিয়ে গ্রীষ্মের রোদে ধুকতে থাকা বৃক্ষরাজি নতুন যৌবন পেয়ে হয়ে ওঠে ঝলমলে। পাশাপাশি পুরো একুশ একর যেন হয়ে ওঠে বাহারি ফুলের স্বর্গরাজ্যে। জারুল, সোনালু এবং কৃষ্ণচূড়ার ঝলকে গাছে গাছে বসে বেগুনি, হলুদ আর লাল রঙের মেলা।

নতুন ফোটা জারুল ফুল (ছবি : অনিক গোমস্তা)

ক্যাম্পাসের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণ, আইইআর ইনস্টিটিউটের সক্রেটিস চত্ত্বর এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ প্রাঙ্গণে সোনালু ফুলের হলুদ আভায় বসেছে হলুদিয়ার মেলা। যেন শূন্যে এক টুকরো সরিষাক্ষেত। বুদ্ধিজীবী চত্ত্বর, জিরো পয়েন্ট, চাকসু ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও যাদুঘর প্রাঙ্গণ, কলা ঝুপড়ি, লেডিস ঝুপড়ি, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ এবং বিজ্ঞান অনুষদসহ ক্যাম্পাসের সর্বত্রই বেগুনি আর লালের মিতালী।

জারুল আর সোনালু ফুলের মিতালী (ছবি : অনিক গোমস্তা)

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের বাহন শাটল ট্রেনে যাতায়াতের সময়ও চোখে পড়ে নতুন রূপে পাকা চুলের মতো গজিয়ে ওঠা কাশফুল। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীদের পেটে নিয়ে কাশফুলের রাজ্য মাড়িয়ে ঝিকঝিক শব্দে ছুটে চলেছে শাটল ট্রেন।

কাশফুলের নজরকাড়া দৃশ্য (ছবি : অনিক গোমস্তা)

‘গ্রীষ্মের এই খরতাপে বাহারি ফুলের এমন দৃশ্য সত্যিই মনোলোভা। এত সুন্দর নজরকাড়া দৃশ্য আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। রূপসী ক্যাম্পাস দেখাচ্ছে তার নতুন এক রুপ।’ এভাবেই ক্যাম্পাসের এই অভিনব সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদুল জামান অরন্য।

কৃষ্ণচূড়ায় ছেঁয়ে গেছে ক্যাম্পাস (ছবি : অনিক গোমস্তা)

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মোস্তারির ভাষায়, ‘দুই দিনের বৃষ্টির ফলে ক্যাম্পাসের এ এক নতুন রূপ দেখলাম। সৌন্দর্যের রাণী এ ক্যাম্পাসে এত রুপ অন্য সব ঋতুকে হার মানায়। এ ক্যাম্পাসের অংশ হতে পেরে সত্যিই আনন্দ লাগছে।’

ওডি/আরএআর