• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাবিতে ব্যতিক্রমী ব্যাঙের বিয়ে

  জাবি প্রতিনিধি

১৩ এপ্রিল ২০১৯, ২২:১০
জাবিতে ব্যাঙ-ব্যাঙির বিয়ে
ব্যাঙ-ব্যাঙির বিয়ে (ছবি : সংগৃহীত)

চৈত্রের তাপ দাহে মাথায় মুকুট ও ছাতা নিয়ে পাত্র সেজে বিয়ের বাড়িতে উপস্থিত কুনো ব্যাঙ। আর মাথায় ঘোমটা দিয়ে কনে সেজে পাত্রের অপেক্ষায় বসে আছে সোনা ব্যাঙ। অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষ হচ্ছে না! একটু পরই শুরু হবে বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা। সব রীতি মেনেই এমন এক ব্যাঙ-ব্যাঙির বিয়ের পূর্ববর্তী ব্যতিক্রমী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মহুয়া চত্বরে।

চৈত্র সংক্রান্ত উপলক্ষে শনিবার (১৩ এপ্রিল) ব্যাঙ-ব্যাঙির বিয়ের এ পান চিনি আয়োজন করে কলা ও মানবিকী অনুষদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে মহুয়া তলায় বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে বিয়ে পূর্ববর্তী এ আনুষ্ঠানিকতা। বিয়ের পান চিনি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মুড়ি-মুড়কি দিয়ে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করা হয়েছে।

হিন্দু রীতিতে ধুমধামের মধ্য দিয়ে বিবাহ বন্ধন পূর্ব এ পান চিনির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। পুরুষ ব্যাঙের মাথায় মুকুট, আর মেয়ে ব্যাঙের মাথায় ঘোমটা পরিয়ে তাদের বিয়ে পূর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। বর ব্যাঙের প্রতীকী অভিভাবক বাবা হিসেবে ছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইউসুফ হাসান অর্ক, বিপরীতে মেয়ে পক্ষের অভিভাবক হিসেবে ব্যাঙির বাবা ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি আতিয়ার জামান।

শনিবার বিকেলে আয়োজনে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবন থেকে বরপক্ষ যাত্রা শুরু করেন। যাত্রায় বাজানো হয় মাইক। ঢাকঢোলের সঙ্গে শুরু হয় নাচ-গান। বেলা ৪টার দিকে ব্যাঙের বাবা (প্রতীকী) ইউসুফ হাসান অর্ক বরকে নিয়ে হাজির হন কনের বাড়িতে।

এ সময় কনের বাড়িতে চলছিলো বরপক্ষকে আপ্যায়নের কাজ। বরপক্ষ-কনে পক্ষের বাড়িতে আসার পরপরই শুরু গ্রামীণ ভাষায় তর্ক-বিতর্ক। অনেকক্ষণ যাবত চলে দুই পক্ষের কথা কাটাকাটি। তারপর সম্পন্ন হয় আংটি বদল পর্ব। বর ব্যাঙকে আংটি পড়িয়ে দেন কনের বাবা আতিয়ার জামান, কনে ব্যাঙিকে আংটি পড়িয়ে দেন বরপক্ষের অভিভাবক ড. ইউসুফ হাসান অর্ক।

সবশেষে উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে পান চিনি সম্পন্ন হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী আষাঢ়ে মহা ধুমধামে তাদের মধ্যে বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিশ্রুতি শেষে উভয় পক্ষের মাঝে মুড়ি-মুড়কি বিতরণ হয়।

পান চিনি অনুষ্ঠানের আয়োজক কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক জানান, 'বৈচিত্র্যময় জীবজগতে ব্যাঙকুল প্রজাতি প্রকৃতির এক বিস্ময়। উত্তর-আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে আমরা প্রকৃতিতে তাদের ভূমিকাকে অনুধাবন না করে জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে তাদের অবহেলা করছি। এই অবহেলার দায়মুক্তির লক্ষ্যেই চৈত্র-সংক্রান্তির এই শেষ লগ্নে তাদেরকে বর-কনে রূপে সবার সামনে নিয়ে আসা।'

অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান বলেন, 'আমরা শিক্ষিত হলেও সুশিক্ষিত নই। আমাদের পূর্বসূরিদের শিক্ষা ছিল না, কিন্তু প্রকৃতি জ্ঞানে ছিলেন তারা সমৃদ্ধ। তারা ধ্রুবতারা দেখে দিক নির্ণয় করতেন, ঘর বা গাছের ছায়া দেখে সময় নিরূপণ করতেন, ব্যাঙ প্রকৃতির অসীম ক্ষমতাকেও তারা অনুধাবন করেছিলেন। আর এ কারণেই তারা মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাশায়, ব্যাঙ প্রজাতির সুখ, সমৃদ্ধি ও বংশ বিস্তার কামনায় আষাঢ়ে অনেক ঘটা করেই ব্যাঙ যুগলের বিয়ে দিতেন। অনেক পরে হলেও এর তাৎপর্য আজ আমরা অনুধাবন করেছি। তাই চৈত্র-সংক্রান্তির এই সাঁঝের বেলায়, ঘটা করেই ব্যাঙের পান-চিনির অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড