চবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বর্ষা চৌধুরীকে বাসের হেলপার ও ড্রাইভার দ্বারা যৌন হয়রানি চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম নগরীর ৩ নম্বর রুটের একটি পাবলিক বাসের হেলপার এবং ড্রাইভারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৪ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুক ওয়ালে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে পোস্ট দেন। এবং সবশেষে 'এই দেশে আর থাকবোনা ভাই' বলেও উল্লেখ করেন।
ঐ শিক্ষার্থীর তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, 'বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৩ টার দিকে বিভাগের নির্দিষ্ট ক্লাস শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এলাকা থেকে নগরীর নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ৩ নম্বর রুটের একটি বাসে আমি ও আমার বান্ধবী উঠি। জায়গা না থাকায় আমি বাসের সামনে হেলপারের কাছাকাছি বসি। নগরীর জিইসি মোড়ে বাস পৌছালে আমার বান্ধবী তার কিছু বাকি কাজের জন্য বাস থেকে নেমে যায়। বাসটি নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় পৌঁছালে একে একে সকল যাত্রী নেমে পড়ে। যেহেতু আমার গন্তব্য নিউমার্কেট মোড় তাই আমি বাসেই ছিলাম। সবাই নেমে যাবার পর বাস চালু করে হঠাৎ বাসের ড্রাইভার আর হেলপার রাস্তা পরিবর্তন করে স্টেশন রোডের দিকে চলতে শুরু করে। আমি তখন হেলপারকে বাস থামিয়ে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বলি। এ সময় বাসের হেলপার আমার দিকে তেড়ে এসে এবং গলায় থাকা ওড়না দিয়েই পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে যৌন হয়রানির চেষ্টা চালায়। তখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। শ্বাসরোধ হয়ে আসায় আমি চিৎকার ও করতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে আমার ডান হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে হেলপারকে সব শক্তি দিয়ে আঘাত করি। আঘাতটা সম্ভবত তার চোখে লাগে যার কারণে হেলপার পেঁচানো ওড়নাটা ছেড়ে দেয়। এরপর আমি বাসের দরকার দিকে ছুটে যাই এবং লাফ দেই। বাসের ড্রাইভারও তখন হেলপারের উদ্দেশ্যে বলছিলও ‘মাইয়াটারে ধর শালা’। ততক্ষণে আমার মনে হচ্ছিল আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রিকশাওয়ালা আমাকে লাফ দিয়ে পড়ে যেতে দেখে এগিয়ে আসেন। পরে তারা সাহায্যেই আমি বাসায় আমার মায়ের কাছে ফিরে আসি। সে সময় আমি আমার কান্না থামাতে পারিনি।'
ফেসবুকে এই ঘটনার কথা প্রকাশের পর থেকেই তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কেউ কেউ সাহস ও জুগিয়েছেন এই লোমহর্ষক পরিস্থিতি থেকে যুদ্ধ করে ফিরে আসার জন্য।
পরবর্তীতে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী চট্টগ্রামে কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এই মামলা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্ট (ছবি : সংগৃহীত)
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, 'ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী বাদী হয়ে শুক্রবার বিকেলে একটি মামলা দায়ের করেন। আমরা মামলাটি গ্রহণ করেছি। বাস মালিক সমিতিকে ডাকা হয়েছে। আমাদের একটা টিম তদন্তের কাজ করে যাচ্ছে। আসামীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি আমরা। আসামীদের শনাক্ত করতে পারলেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'
এদিকে সহপাঠী লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, '৩ নং বাসের অভিযুক্ত হেলপার ও ড্রাইভারকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি এরকম ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।'
এদিকে প্রশাসনের কাছ থেকে যথাযথ বিচার না পেলে ক্লাস বর্জন সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড