লোকসংস্কৃতি রক্ষায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণ

শত বছরের উৎসব বাংলা নববর্ষ মানেই বাঙালির কাছে ভিন্নরকম এক আবেদনের উপলক্ষ। বাংলার চিরন্তন লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় এই উৎসবে ঐতিহ্যের ধারা ধরে রাখতে দেশজুড়ে চলছে প্রস্তুতি। থেমে নেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) এর শিক্ষার্থীরাও।

'ঝড়কে নেব, উড়ে যাক যা গত; বৈশাখে মাতুক প্রাণের ডাক যত' এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দক্ষিণ বাংলার সর্ববৃহৎ চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) উৎযাপনে খুবিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনের প্রথম দিনে চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে খুবি প্রাঙ্গণ মুখরিত হবে ঘুড়ি উৎসব, লাঠি খেলা, মোরগ লড়াই এবং লাটিম খেলার মতো গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের ধারক ও বাহকের সংমিশ্রণে। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাহারি রঙের প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুনে মোড়া টাট্টু ঘোড়া, হুতুম প্যাঁচা, ময়ূর, গিরগিটি এবং টিয়াসহ বিলুপ্ত প্রায় এসব প্রাণীর উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

ট্যাপা পুতুলের (টিপে টিপে মাটির তৈরি প্রাণীসমূহ) আদলে তৈরি এসব বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এ উদ্যোগ। একসময় এদেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ ট্যাপা পুতুল তৈরি করে জীবনধারণ করত। অথচ প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে ট্যাপা পুতুল এবং সত্যিকারের প্রাণী দুটোই হারিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী নীল দাস বলেন, 'আমাদের লোক সংস্কৃতির হারিয়ে যাওয়া এসব সৌন্দর্যকে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এসব পশুপাখি সংরক্ষণে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।'

টাট্টু ঘোড়া নির্মাণ কাজ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

তিনি আরও বলেন, 'পৃথিবীতে প্রতিবছর ৫-৫০ মিলিয়ন পাখি মারা যাচ্ছে। যার দায় মানব সভ্যতার ওপর বর্তায়।'

এবার মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকবে পুতুল নাচ, নাগরদোলা, ফানুস উৎসব এবং কাবাডি খেলা। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ বাংলার ইতিহাসে এই প্রথম সর্ববৃহৎ আলপনার সাক্ষী হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এছাড়া দিনব্যাপী থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

মেলায় ২৯টি ডিসিপ্লিনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। স্ব-স্ব স্টলকে গ্রামীণ আবহের আদলে সাজাতে এবং বিপণন সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে শিক্ষার্থীরা।

ওডি/এমএ