• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চবিতে বর্ষবরণ প্রস্তুতি

নন্দিত স্বদেশ, নন্দিত বৈশাখ

  মাহবুব এ রহমান, চবি প্রতিনিধি

১১ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:০৬
চবি
চবিতে বৈশাখ বরণ প্রস্তুতি

বছর ঘুরে দিনপঞ্জিকার পাতা থেকে আরেকটি বছরের বিদায়। ১৪২৫ শেষে ১৪২৬ বঙ্গাব্দ কড়া নাড়ছে দরজায়। পুরনো দিনের সব জীর্ণতা, দুঃখ আর অপ্রাপ্তিকে ভুলে গিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে উদগ্রীব সবাই। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের উৎসব এই বর্ষবরণ।

চারদিকে সাজ সাজ রব। সবাই ব্যস্ত নতুন বছরে নিজেকে গোছানো নিয়ে। নিজের আশপাশের মানুষ, পরিবেশ আর সময়কে গোছানো নিয়ে। যা কিছু ভুল, যা কিছু কষ্ট, রাগ, অভিমান আর ব্যথার সব ভুলে এবং শুধরে নিয়ে শুরু হয় এক নতুন পথচলার প্রত্যয়। যা কিছু ভালোলাগার, ভালোবাসার, হাসির কিংবা সুখের তাই নিয়ে চলতে আকাঙক্ষা সবার।

‘এসো এসো ওগো নবীন,

চলে গেছে জীর্ণ মলিন-

আজকে তুমি মৃত্যুবিহীন

মুক্ত সীমারেখা।’

কবি জীবনানন্দ দাশ এভাবেই তার কবিতায় স্বাগতম জানিয়েছেন এই বাংলা নববর্ষকে।

চবি

নতুন বছরকে স্বাগতম জানাতে প্রস্তুত চবি

নতুন এই বছরকে স্বাগতম জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে আয়তনে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ২১০০ একরের সবুজাভ ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা বর্ষবরণকে ঘিরে পার করছেন বেশ ব্যস্ত সময়।

চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী আখলিমা জামফির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের পহেলা বৈশাখে চারুকলায় কর্ণফুলী নদী নিয়ে সব কাজ পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজকন্যা-রাজপুত্র, টেপা পুতুল, পালকি, হাতি, সাম্পান, লক্ষীপেঁচা, মাটির সরা এবিং ম্যুরাল ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালি ঐতিহ্যকে যেন রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে। সবাই আনন্দের সঙ্গে কাজ করছে।

চবি

উৎসবমুখর পরিবেশ প্রস্তুতি চলছে

মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালির নতুনত্ব আনতে এবার প্রথম ভিন্ন ধারায় কর্ণফুলীকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া, আয়োজন হচ্ছে গান-নাচ এবং কবিতা আবৃত্তিসহ নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাশাপাশি আয়োজনে থাকছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ‘মস্তক তুলিতে দাও উদাত্ত আকাশে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় শুরু হবে এ মঙ্গল শোভাযাত্রা।

চবি

বর্ষবরণের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে

বর্ষবরণের প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষদ এবং বিভাগসমূহও আলাদা আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন বছরকে স্বাগতম জানাতে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন বর্ষবরণকে ঘিরে। কথা হয় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিহা রহমান সুস্মিতার সাথে।

চবি

জমকালো আয়োজন

তিনি জানান, প্রতি বছর বৈশাখের আমেজটা ক্যাম্পাসে চোখে পড়ার মতো, কিন্তু সেখানে আরও অনেক বেশি নতুনত্ব জোগায় যখন ডিপার্টমেন্ট থেকে র‍্যালি বের হয় এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সেই দিক থেকে আমার ডিপার্টমেন্ট ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্টের অনেক সুন্দর প্রস্তুতি চলছে।

চারিদিকে নতুন রঙের ঘ্রাণ, নতুন আলপনা, নতুন শাড়ি-পাঞ্জাবির কেনাকাটা সব মিলিয়ে অন্যরকম এক উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেক বেশি উপভোগ করছি। পাশাপাশি ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের মানুষদের রঙিন সাজে দেখার অপেক্ষায় আছি।

চবি

আলপনায় রঙিন হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ

এ দিকে, ‘নন্দিত স্বদেশ নন্দিত বৈশাখ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে জমকালো আয়োজন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বর্ষবরণ উৎসবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক মো. আলী আজগর চৌধুরী।

চবি

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সামনে ঝুলছে বর্ষবরণ প্রস্তুতিমূলক ব্যানার

তিনি বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে বর্ষবরণ উৎসব। শিক্ষার্থীরা এই উৎসব অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করে। তাই আমরা সুন্দর একটা আয়োজনের চেষ্টা করছি।

প্রক্টর অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী বলেন, নববর্ষের দিন সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহীদ আব্দুর হলের মাঠে এসে শেষ হবে। এরপর আব্দুর হলের মাঠে জাতীয় সঙ্গীত ও এসো হে বৈশাখ গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের এবং চবি পরিবারের অংশগ্রহণে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশগ্রহণ করবে- চবি মহিলা সমিতি, চবি সঙ্গীত বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরপর থাকবে শিক্ষকদের রম্য বিতর্ক অনুষ্ঠান।

চবি

প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা

এছাড়া, বিকালে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্যে থাকছে জনপ্রিয় বাউল শিল্পী চিশতি বাউল ও তার দল এবং ব্যান্ডদল ‘মাকসুদ ও ঢাকা’। অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে থাকছে- চবির বুদ্ধিজীবী চত্বরে হাডুডু খেলা, উন্মুক্ত মঞ্চে নাটক, চাকসু প্রাঙ্গণে বউচি খেলা এবং চবির জারুল তলায় পুতুল নাচ ও লাঠিখেলা।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সাংবাদিকদের আরও জানান, পহেলা বৈশাখের দিন ক্যাম্পাসে যাবতীয় বহিরাগত যানবাহন নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া, নির্দিষ্ট সাউন্ড সিস্টেম ছাড়া অন্য কেউ কোনো ধরনের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবে না। উচ্চ শব্দের বাঁশি, ভুভু খেলা, মুখোশ পরার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞার কথা জানান তিনি।

চবি

উৎসবের আমেজে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা

পহেলা বৈশাখের এ উৎসবের জন্য ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি মূল কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, সমন্বয়ক হিসেবে আছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন প্রক্টর অধ্যাপক মো. আলী আজগর চৌধুরী।

এছাড়া, অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ১০টি সাব-কমিটিও গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে উৎসবের দিন পুলিশ, র‌্যাব, ডিজিএফআই, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি এবং রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত থাকবে বলেও জানান তিনি।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড