গণবি প্রতিনিধি
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বৈধ উপাচার্যের নিয়োগের দাবিতে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গণবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে।
পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দেন।
এরপর দুপুর ১২টার দিকে ইউজিসি কর্তৃক উপাচার্যের নিয়োগের দাবিতে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে পুনরায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, বৈধ একটা ভিসি দে’ স্লোগানের আওয়াজ তুলে মিছিল করতে দেখা যায় তাদের।
এরপর আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সাধারণ ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক সহ আন্দোলনকারীদের চারজন শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন । উক্ত আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পূর্ণাঙ্গ মেয়াদের উপাচার্য ড. মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ, দুই অনুষদের ডিন অধ্যাপক মনসুর মুসা ও ড. হাসিন অনুপমা আজহারী, রেজিস্টার মো. দেলোয়ার হোসেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মূর্ত্তজা আলী প্রমুখ।
আলোচনায় আন্দোলনকারীদের পক্ষে সকল দাবি তুলে ধরেন সাধারণ ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের সকল দাবি মেনে নিয়ে তদসংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। রেজিস্ট্রার দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ছাত্রদের সকল যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে আছেন তিনিও। ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি তুলে ধরবেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর উপাচার্য পদে লায়লা পারভিন বানুর বৈধতা সংক্রান্ত রিট মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন আদালত। রিট পিটিশন নম্বর : ১৬৪৪৮/২০১৭। রায় হাতে পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সহায়তা দানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাদী পক্ষ রায় হাতে পান ৩ এপ্রিল, ২০১৯ তারিখে।
শিক্ষার্থীদের স্লোগান মুখর গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ (ছবি : দৈনিক অধিকার)
তবে এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি যদি আবার আপিল করে তাহলে উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়ত হয়ে যাবে। ডা. লায়লা পারভিন বানু যেহেতু ইউজিসি’র নিকট বিতর্কিত সেহেতু ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে প্রয়োজনে তাকে বাদ দিয়েই উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ১০ দফা দাবি পৌঁছে দেয়।
দাবিগুলো হলো-
১. বৈধ ভিসি নিয়োগের কমপক্ষে ২১ কার্যদিবস পর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২. ভিসি নিয়োগের আগে সমস্ত প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। ৩. শুধু মাত্র ভিসি নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম করার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট অফিসিয়াল কার্যক্রমগুলো ছাড়া এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট উত্তোলন সহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ব্যতীত অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমগুলো বন্ধ থাকবে। ৪. আলোচনা এবং আন্দোলন একই সাথে চলমান থাকবে। ৫. বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ-প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত খেলায় ব্যাঘাত ঘটে এমন কোন কার্যক্রমে আমাদের ‘সাধারণ ছাত্র পরিষদের’ কোনো প্রকার সমর্থন থাকবে না। আমরা এই টুর্নামেন্টের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। ৬. ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে আমাদের দ্রুত আলোচনার জন্য বৈঠকে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। ৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পদে নিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন আমাদের আন্দোলনকে ইস্যু করে আটকে রাখা যাবে না। ৮. আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এর জন্য পরবর্তীতে কোন জরিমানা আদায় করা যাবে না। ৯. আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার হয়রানিমূলক মামলা-মোকদ্দমা, বহিষ্কারাদেশ সহ শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করতে পারবে না। ১০. যেহেতু ডা. লায়লা পারভিন বানু ম্যাম কে নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু দ্রুত নতুন করে যোগ্য তিনজন ব্যক্তিকে প্যানেল করে ভিসি পদে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড