জাবিতে মসজিদের বেহাল দশা, নীরব প্রশাসন

বেহাল দশা দেখা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আ ফ ম কামালউদ্দিন হল এবং শহীদ সালাম বরকত হল সংলগ্ন মসজিদে। মসজিদটির অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে, দেয়ালে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ফাটল এবং ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফলে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নামায আদায় করছেন দুই হলের কয়েক হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী, কিন্তু এত সমস্যা থাকার পরও যেন দেখেও দেখছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য হলগুলোতে হলের ভেতরে মসজিদ থাকলেও গঠনগত সমস্যার কারণে আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ও শহীদ সালাম-বরকত হলের মাঝখানে ১৯৯০ সালে নির্মাণ করা হয় এক তলা বিশিষ্ট এই মসজিদটি। নির্মাণের পরের বছরেই ফাটল ধরে মসজিদটির। এরপর যৎসামান্য সংস্কার করে কর্তৃপক্ষ। ঝুঁকিপূর্ণ এ মসজিদটিতে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক লোক নিয়মিত নামাজ আদায় করতে আসেন।

মসজিদে জায়গা সংকট (ছবি : দৈনিক অধিকার)

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় ধরনের ফাটল ধরেছে মসজিদটির ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন অংশে। ওপরের অংশ কাঁচ দিয়ে ঢেকে রাখায় গরমের দিনে প্রচণ্ড রোদের তাপে নামায আদায় করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া জায়গার সংকট তো আছেই। বিশেষ করে শুক্রবার জুম্মার দিনে প্রচণ্ড রকমের জায়গা সংকট দেখা দেয়।

এসব ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। মসজিদটি সংস্কারের বিষয়ে প্রশাসনকে একাধিকবার অবগত করলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয় নি তারা। ফলে অনিশ্চয়তায় মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মসজিদটির সংস্কার কাজ।

মসজিদের ছাদ ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মৃধা মোহাম্মদ বেলাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের ভেতরে ব্যাপক ফাটল দেখে আসছি। সুদীর্ঘ কাল এমন ফাটল থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে মসজিদটির সংস্কার কাজ হতো, কিন্তু প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে এর সংস্কার কাজ হচ্ছে না। ফলে যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটতে পারে।

আকিক হোসেন সিয়াম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, পুরোনো মডেলে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের বিল্ডিং, ওপরে কাঁচ দেয়ার কারণে রোদের তাপে নামাযের সময় ভিতরের অংশ প্রচণ্ড গরম থাকে। বিভিন্ন দিক দিয়ে ফাটল ধরেছে, জুম্মার নামাযের সময় জায়গা হয় না। কর্তৃপক্ষ হল অফিস ডিজিটাল মডেলে তৈরি করে এসি লাগাচ্ছে। অথচ মসজিদটির মেরামতের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

ঝুকিপূর্ণ মসজিদ ভবন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এ বিষয়ে মসজিদের ইমাম আবদুল কাদের বলেন, মূলত নির্মাণকাজ ভালো না হওয়ার কারণে মসজিদের দেয়াল ও ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. জুয়েল রানা বলেন, সত্যি বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। দুই হলের অসংখ্য শিক্ষার্থী মৃত্যুর ভয় নিয়ে নামায আদায় করছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো মেরামতের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অতিদ্রুত মসজিদটি সংস্কার করা হোক। এই বিষয়ে আমিও প্রশাসনের সাথে কথা বলব।

নির্মাণের পরের বছরেই ফাটল ধরে মসজিদটি (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আ.ফম কামাল উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমি নিজেই মসজিদটি সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। সত্যি মসজিদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ইতোমধ্যে নতুন বাজেটে মসজিদটি সংস্কারের জন্য আলোচনা চলছে। অতিদ্রুত কমিটি গঠন করে ইঞ্জিনিয়ার সেকশনের মাধ্যমে মসজিদটি ভেঙে নতুন করে মেরামত কাজ শুরু হবে।

ওডি/আরএআর