মোহাম্মদ রনি খাঁ
সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, পরিবহন শ্রমিকদের অসদাচরণ, বাসে যৌন হয়রানি সহ ধাক্কা দিয়ে শিক্ষার্থী ফেলে দেওয়া ও হত্যার ঘটনা সব মহলে নাড়া দিয়ে গেছে। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে এমন সব উদ্বিগ্নতা যেন পিছু ছাড়ছে না।
আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য প্রতিষ্ঠার পর ২০ বছর পার হয়ে গেলেও সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো পরিবহন খাতে সুবিধাজনক ব্যবস্থা করতে পারে নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় প্রশাসন কখনো পরিবহন ব্যবস্থা দিবে না' মর্মে ভর্তি ফরমেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক স্বাক্ষর নেয়।
দেশে যখন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপদের সম্মুখীন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। আর দশটা সাধারণ ঘটনার মত পাবলিক বাসে পরিবহন শ্রমিকদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি শিকার হওয়া যেন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের চিন্তা যেনো পিছু ছাড়ছে না।
আবার যাতায়াতের সময় শিক্ষার্থী ভাড়া অর্ধেক হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী বাস স্ট্যান্ডে থামতে চায়না লোকাল বাসগুলো। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর দেখা মেলে বাসের। ভাড়া নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অভাবে বাস মালিকের দোহাই দিয়েই পরিত্রাণ পেয়ে যাচ্ছেন বাসের হেল্পার আর ড্রাইভারগণ।
সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল হওয়াতে সকালে বাসে যাত্রীর প্রবল চাপ থাকে। দূর থেকে যারা সাভার বা আশুলিয়ায় আসতে চায় তারাও পড়েন বিড়ম্বনায়। রাস্তায় ট্রাফিক ও মানুষের প্রচুর চাপ থাকায় অনেকেই সকালের ক্লাসে সময়মত উপস্থিত হতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসপেক্টাস এবং ভর্তি ফরমের স্বীকারোক্তির জন্য কেউই জোর গলায় পরিবহনের দাবি তুলতে পারে নি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এখন সময়ের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থা।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ আসে ঢাকার উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, মিরপুর, সাভার ও মানিকগঞ্জ এলাকা থেকে। মানিকগঞ্জ থেকে যাতায়াত-কৃত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের ১ম বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, 'বাসা থেকে বের হয়েই প্রতিদিন সকালে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরেও সিটিং সার্ভিস বাসগুলো নিতে চায় না। বাধ্য হয়ে লোকাল বাসে উঠি তখন কেমন বিব্রত অবস্থায় পড়ি, তা বুঝানোর ভাষা আমার জানা নেই! শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থাকলে, এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।'
মিরপুর থেকে আগত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফার্মেসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, 'মিরপুর থেকে ক্যাম্পাসে আসতে প্রতিদিন রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। স্টুডেন্ট ভাড়া দেই বলে সিটিং সার্ভিস বাসগুলো নিতে চায় না। নিলেও ঝামেলা করে। প্রায় দিন কথা কাটাকাটি হয়। এমন অনেক দিন হয় যে ক্লাস শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টা আগে বের হলেও সময়মত পৌছাতে পারি না'।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা করা হবে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'আগে আমাদের দূর থেকে প্রতিদিন এসে ক্লাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। তাই প্রশাসন ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা করে নি। তবে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই শিক্ষার্থীদের সব রকম সুবিধা করে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। আমি বিষয়টি ট্রাস্টি বোর্ডের মিটিংয়ে গুরুত্বের সাথে বলবো'।
বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান আরোহণের স্থান। সেই জ্ঞান আরোহণ যেনো বিঘ্নিত না হয়, এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেনো সবার জন্য জ্ঞান আরোহণের পথ সুগম করে এমনটাই কাম্য গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড