• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সংবাদ সংগ্রহে বাধা

জবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ৪০

  জবি প্রতিনিধি

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৩৯
জবি
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ধাওয়া পালটা ধাওয়া (ছবি : সংগৃহীত)

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে দৈনিক সমকালের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের রাকিব ইসলাম, খবরপত্রের সোহাগ রাসিফ সহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে।

সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে সাত-আটটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারীরা একত্রিত হয়ে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে পদ প্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।

এরপর অন্যান্য পদ প্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস গেট থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অনুসারীরা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে মোবাইলে ছবি ধারণ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় কমপক্ষে ৫ জন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

আহত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার (ছবি : সংগৃহীত)

এরপর বিকেল ৩টার দিকে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থানরত পদ প্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় দুপক্ষের কর্মীরা ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি শকরে। এ সময় কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

সংঘর্ষের ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ কালে স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মী সিএসই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১২ তম ব্যাচের আবিদ আল হাসান, সমাজকর্ম বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কিবরিয়া সহ আট দশ জন সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাকিবের ওপর এবং সাধারণ সম্পাদকের কর্মী ইতিহাস বিভাগের ৮ম ব্যাচের কর্মী আলী হাসান, খবর পত্রের সোহাগ রাসিফ, বিডি ২৪ রিপোর্টের প্রতিনিধি সানাউল্লাহ ফাহাদের ওপর হামলা করে। আহত অবস্থায় পুলিশ রাকিবকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী সুমনা হাসপাতাল এবং লতিফুল ইসলামকে ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে (এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত) সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এ সময় তা‌দের হা‌তে কক‌টেল, চাইনিজ কুড়াল, চাপা‌তি, রামদা, ব‌টি, হ‌কিস্টিক সহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র দেখা যায়।

এদিকে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস এবং ক্যাম্পাসের আশেপাশের দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়।

আহত ২ ছাত্রলীগ কর্মী (ছবি : সংগৃহীত)

সংঘর্ষে জবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান আহমেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুর রহমান, হাসিবুর রহমান শুভ, জুয়েল, জিয়াউল হক, মাহবুবুল হাসান রনি, মহিউদ্দিন অনি, শেখ মেহেদী আল হাসান, ইমরান, অপি, ইমরুল নিয়াজ, টুটুল, শরিফুল ইসলাম হিমু, মিরাজ, শাকিল, মিনুন মাহফুজ, শাহরুক আল শোভন, সোহান, আবু মুসা রিফাত, সাজেদুল নাঈম, কাজী তৈয়ব, কামরুল হাসান, শিশিরসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, 'ক্যাম্পাসে কি হচ্ছে তা আমরা জানিনা। এটা জানার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। কারা কি করছে সেটার দায় এখন আমাদের ওপর এখন বর্তায় না। সভাপতি তরিকুল ইসলামকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজুওয়ানুল হক শোভন বলেন, 'সাংবাদিকদের ওপর আঘাত অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদেরকে (জবি ছাত্রলীগ) একবার স্থগিত করে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

ক্যাম্পাসের গেটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন (ছবি : সংগৃহীত)

এ বিষয়ে জবির সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষকে অস্বীকার করে বলেন, 'ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়া ও ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ইট পাটকেল ছোড়াছোড়ির ঘটনা ঘটেছে। তবে ক্যাম্পাসের ভিতরে কোনো কিছু হয়নি। আমরা সকাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

কোতয়ালি জোনের এসি বদরুল রিয়াদ বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়াতে চাইলে আমরা মাঝখানে অবস্থান নিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দুই দিকে পাঠিয়ে দেই। এ ঘটনায় তিন প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও চার রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড