• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নীলজলের স্মৃতিকথা

  হিমেল শাহরিয়ার

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৫৩
নোবিপ্রবি
নোবিপ্রবির বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের বাহিরে গিয়ে মানুষ উপভোগ করতে চায় ভিন্নতা। সেই ভিন্নতাই স্বাভাবিক জীবনকে দেয় নতুন অনুভূতি। সেই অনুভূতির রেশ থেকে যায় অনেক দিন। যা স্বাভাবিকতার এক গুয়েমিকে দূরে সরিয়ে রাখে। যা চঞ্চল ও সজীব করে রাখে সকল কাজে। আর শিক্ষার্থীদের বাধা ধরা এই নিয়মে ভিন্নতা আনতে যখন আয়োজন করা হয় ভিন্ন কিছু তখন তা শিক্ষার সহায়ক হিসেবেই বিবেচিত হয়।

বর্তমান সময়ের এই দিনে শিক্ষার সহায়ক-শক্তি হিসেবে প্রকৃতির সনে ঘুড়ে বেড়ানোকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর তাই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়মিত ক্লাস, ক্লাস পরীক্ষা তথা শিক্ষার কার্যক্রমে সৃষ্টি হওয়া একঘুয়েমি দূর করতে প্রকৃতির কাছাকাছি ঘুরে আসে। তারা গেল ৬ ফেব্রুয়ারি ২ দিনের জন্য সেন্টমার্টিন ঘুরে আসে। কেমন ছিল তাদের সেই নীলজলের পথের যাত্রা? কিভাবে কাটিয়ে ছিল তাদের সেই সময়গুলো? সেই ভিন্নতার আমেজ কেমন ছিল?

শুধু নীলজলে সাঁতার কাটবে ওই চিন্তায় যাত্রাপথে বসে থাকেনি সফরের সঙ্গীরা। সারা রাস্তায় মাতোয়ারা ছিল তারা। রাত ৯টার দিকে বাস ছাড়ার আগ মূহুর্তে ফটোশেসন আর এর সমার্থক সেলফি পর্বের পর চলে স্যারদের মাধ্যমে গণনার কাজটি। কে কে, কয় জন উঠেছে, আর ক্যাম্পাসে আসতে ব্যর্থরা রাস্তার কোথায় ওঠবে তা জানার পর ড্রাইভারের দিকে থাকিয়ে ছিল সবাই। চাবি ঘুড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনের সেই আওয়াজ, তার সঙ্গে চাকার ঘূর্ণনের অনুভূতি। সবাই সবার দিকে থাকিয়ে কেমন যেন চিন্তায় মগ্ন।

হয়তো ট্যুরের আশা-নিরাশার হিসেব নিকেষ, তবে নিমিষেই সব হিসেব শেষ হয়ে যায় যখন বাসের চাকাটি গেইট পার হয়ে মূল সড়কে। নয়নের চলো না ঘুরে আসি অজানাতে দিয়ে শুরু হলো আর শেষ হলো চিন্তার ক্লেশ, কণ্ঠের খেলার সঙ্গে শরীরের ছড়াছড়ি শুরু হয়ে ছিল খানিক পরে। নয়নের কণ্ঠের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার চলতে থাকে কাক-কোকিল কণ্ঠের সুরের মেলা। আর এর মধ্যে রাস্তার বিভিন্ন স্পট থেকে ওঠতে থাকে সেই কয়েকজন সহপাঠী। তাদেরও উষ্ণ সংবর্ধনা দিতে থাকে সবাই। এবার সবাই ওঠার পর এবার পুরোধমে চলে সুরের আসর সেই সঙ্গে হালকা নাচের কৌশল যা বাসের দোলনের সঙ্গে ভিন্নতা আনে। অনেক সময় এইসব চলার পর শারীরিক ক্লান্তি আসলেও আসেনি মনের ক্লান্তি। এবার বসে বসে গল্পের পর ঘুমের দেশে সবাই।

ভোর ৫টা ক্লান্ত শরীর, হালকা শীতলতা। সবার ঘুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ক্লান্ত ঘুমের পর সবাই শেষ হাই তুলে উঠতেছে। গাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে সবাই। প্রায় ভোর ৫টার কাছাকাছি। হাঠাৎ বাসটি থামল৷ ঘুম ঘুম চোখে সবাই চারপাশে থাকিয়ে দেখছিল। আরও কয়েকটি বাস এখানে ছিল। প্রায় সবাই বুঝতে পারল এসে পড়ছে স্থল পথের শেষ সীমানায়। এরপর নৌ যাত্রা। তবে এখনও অনেক সময় বাকি। ঘুমের পূর্ণতা পায়নি। তাই অনেকে ঘুমিয়ে ছিল। এরই মধ্যে অন্ধকার শেষে আলো ছড়িয়েছে।

সবার ঘুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ক্লান্ত ঘুমের পর সবাই শেষ হাই তুলে উঠতেছে। গাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে সবাই। চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে চারপাশ। পাতরাশের পরেই সবাই ঘাটের দিকে এগিয়ে চলছে এলোমেলোভাবে। অনেক আগেই পৌঁছে যাওয়ায় সময় ছিল অনেক তাই আশেপাশের সবকিছু চোখ ভুলিয়ে দেখছে সবাই। চারপাশকে খুব সুন্দর বলা যাবে না, তবে সারা রাত বাসের শীতলতা আর অন্ধকারে পর সূর্যের আলোর উষ্ণতার সঙ্গে হাঁটাতে থাকাটা ভালোই ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জাহাজের দিকে সবার ছুটে চলা। জাহাজেও থেমে ছিল না আনন্দ হৈ হুল্লোড়। দিলবার দিলবার কিংবা নাগিন নাগিন গানের সুরে সুরে নেচে সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিল মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের নাগেরা, আর তাদের সেই আনন্দের মুহুর্তগুলো মোবাইলে বন্দি করে নাগিনরা।

আগেই বুক করা ছিল রিসোর্ট। সেখানে সবাই পরিপাটি হয়ে খাবার পর্বে। সেই পর্বটি সকলে দ্রুত শেষ করে সমুদ্র পাড়ে। সেখানের উদ্দামতা ছিল অব্যক্ত। কেউ স্থলে কেউ জলে কেউ বা সাইকেলে চারদিকে প্রদক্ষিণ। সন্ধ্যার সূর্য অস্তের পরেই সবার রিসোর্টে ফেরা। এবার সবাই মিলে আনন্দ আর হৈ হুল্লোড়। লটারির ভাঁজে ভাঁজে প্রকাশ পাচ্ছে সবার চাপা প্রতিভা। এর মধ্যেই অর্ধেক চাঁদ টুকু উঁকি দিয়েছিল। এর মধ্যেই চলছে সব কিছু। রাতের সেই পর্ব শেষে সবাই যার যার রুমে। হয়তো গল্প খুনসুটিতে কাটিয়ে ছিল রাতটুকু।

সকাল হলো, নাস্তা শেষে সবাই তৈরি হচ্ছে নীলজলে শরীর ভেজানোর প্রস্তুতিতে। নৌকা করে এবার ছেড়াদ্বীপে পথে। সেখানেই প্রায় অর্ধ দিবস পার। বালি আর পানির ছুড়াছুড়িতে একে অন্যকে ঘায়েলের চেষ্টা। একে অন্যকে পানিতে ছুড়ার চেষ্টা। ছেড়াদ্বীপের সেই ক্ষুদ্র বনকে কেউ কেউ মনে করে নিয়ে ছিল গহীন বন। আর সেই বন পাড়ি দিয়ে কেউ নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছিল বিয়ার গেইলস হিসেবে। তবে সেই হিসেবে যোগ হয়ে ছিল সবাই। কারণ একজন কে অনুসরণ করে সবাই সেই সুযোগটা নিয়ে ছিল। সেই সঙ্গে সৃন্মির কুঠিরে রাখার জন্য তুলা হয়ে ছিল কিছু ফটো। এমন অনেক কিছু করতে করতে কেউ থাকিয়ে ছিল ঘড়ির দিকে। সময়ের হিসেব শেষের পথে। সবাইকে ফিরতে হলো। সবকিছু গুছিয়ে এবার জাহাজে উঠার জন্য পা বাড়িয়েছে। জাহাজ ছাড়লে সবাই দ্বীপের দিকে চেয়ে রইল। এবার দ্বীপটা বড় থেকে ক্ষুদ্র হতে হতে মিলিয়ে গেল। গাঙচিল থেকে এবার নদী পথ ধরে ঘাটে ফেরা হলো।

লেখক : শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন : পিডিএফ জাবি শাখার নতুন সভাপতি কাজল, সম্পাদক রবিউল

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড