প্রায় দেড় যুগ পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রকৌশল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

বৈশ্বিক মহামারি করোনার (কোভিড-১৯) কারণে নানান জল্পনা-কল্পনা শেষ করে প্রায় ১৭ বছর পর দেশে চারটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তিনটিকে নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। প্রায় দেড় যুগ পর তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (রুয়েট) নিয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ/লেভেল-১ এর সমন্বিত ভর্তি আজ শনিবার (১৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এর আগে করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে বেশ বেগ পেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সহ চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটিকে। দেশের চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাব দেওয়া হয় ইউজিসি থেকে। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) তার এক নায়কতন্ত্র জারি রেখে পুরো নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য দাবি করে। বুয়েটের প্রস্তাবনা এমন ছিল যে, পুরো ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক বিষয়গুলো সরাসরি নিয়ন্ত্রণ হবে বুয়েটকে কেন্দ্র করে যাদের নেতৃত্ব দিবে স্বয়ং বুয়েট। পরীক্ষা গ্রহণ থেকে ভর্তির সকল ধরণের সিদ্ধান্ত বুয়েট কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত হবে।

এমন প্রস্তাবনা মেনে নিতে নারাজ ছিল বাকি তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট। এরপর বারবার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না আয়োজক কমিটি। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বুয়েটকে ছেড়ে বাকি তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। করোনা মহামারির কারণে দুই ধাপে পেছানো হয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ। ১ম ধাপে ১২ জুন পরীক্ষা গ্রহণের কথা থাকলেও দুমাস পিছিয়ে তা ১২ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। এরপরও তা বাতিল করে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আলোচনা সভার মাধ্যমে ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আজ সকাল ১০টা থেকে থেকে স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ পরীক্ষা। এবারের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে গত ৭ নভেম্বর (রবিবার) বিকাল ৩টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন সেবা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণের সাথে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর দ্যা ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি), চট্টগ্রাম কেন্দ্রস্থ চুয়েট রিসোর্স সেন্টারে আয়োজিত উক্ত সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।

চুয়েটের নেতৃত্বে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় চুয়েটের ৯০১টি, কুয়েটের ১০৬৫টি এবং রুয়েটের ১২৩৫টি সহ সর্বমোট ৩২০১টি আসনের বিপরীতে মোট ২৫ হাজার ৬৪৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে ‘ক’ গ্রুপে (ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসমূহ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ) মোট ২২ হাজার ৬১০ জন এবং ‘খ’ গ্রুপে (ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগ) মোট ৩ হাজার ৩৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন।

এর মধ্যে চুয়েট কেন্দ্রে ‘ক’ বিভাগে ৭ হাজার ৪৫৫ জন এবং ‘খ’ বিভাগে ১ হাজার ৪৫ জন মোট ৮ হাজার ৫০০ জন পরীক্ষার্থী, কুয়েট কেন্দ্রে ‘ক’ বিভাগে ৬ হাজার ৯৬৩ জন এবং ‘খ’ বিভাগে ৯৮৪ জন পরীক্ষার্থী, রুয়েট কেন্দ্রে ‘ক’ বিভাগে ৮ হাজার ১৯২ জন এবং ‘খ’ বিভাগে ১ হাজার ৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। প্রসঙ্গত, MCQ পদ্ধতিতে ‘ক’ বিভাগের পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং ‘খ’ বিভাগের পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে বেলা ০১টা ৪৫মিনিট পর্যন্ত একটানা অনুষ্ঠিত হবে।

সমন্বয় সভায় আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে চুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে সহযোগিতা কামনা করে চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘চুয়েট বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ। চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন উপায়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সারাদেশে একটি সুনাম ও আস্থা অর্জন করেছে। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় আমরা সেই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে বদ্ধপরিকর। চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা অন্যান্য তুলনামূলক ভর্তি পরীক্ষার চেয়ে ব্যতিক্রমী ধারায় হওয়াতে এখানে অসদুপায় অবলম্বনের কোনো সুযোগ নেই। দেশের যে কোনো প্রান্তের প্রকৃত মেধাবি শিক্ষার্থীদের চুয়েটে পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চুয়েট ভিসি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি ভর্তি পরীক্ষার দিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর থেকে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দসহ আনুমানিক ২০ হাজারের অধিক লোকজন চুয়েট ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করবেন। সেজন্য ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সমাপ্তি করার লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সহযোগিতা ও নির্দেশনা প্রত্যাশা করছি।

ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন সেবা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভাপতি ও চুয়েট পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, ১৮৬৭ সালে ঢাকা সার্ভে স্কুল, এরপর ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ ইন্জিনিয়ারিং কলেজ রূপে যাত্রা লাভের পর ১৯৬২ সালে স্বাধীনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায় বুয়েট। একই সঙ্গে ১৯৬২ সালে বুয়েটের পাশাপাশি ইন্জিনিয়ারিং কলেজ চট্টগ্রাম এবং ১৯৬৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (বিআইটি) চট্টগ্রাম, যেটি ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) নামে পরিচিত, বিআইটি রাজশাহী, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) নামে এবং বিআইটি খুলনা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(কুয়েট) নামে প্রকাশ লাভ করে।

ওডি/নিমি