নাজমুল হুদা, শাবি প্রতিনিধি
ব্যাগ, লাগেজ ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর হলে ফিরতে শুরু করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। হলের সামনে অনেকদিন পর দেখা গেছে শিক্ষার্থীর সমাগম। এ যেন চিরচেনা এক চিত্র যা দীর্ঘ ১৯ মাস পর সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর সামনে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদেরকে হলে হলে বরণ করে নিতে ব্যস্ততা ছিল হলগুলোতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা নিজ নিজ হলের লোগো সংবলিত মাস্ক, ফুল, কলম, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বরণ করে নিচ্ছে হল কর্তৃপক্ষ। শরীরের তাপমাত্রা মাপার পাশাপাশি অন্তত এক ডোজ টিকার প্রমাণপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ড ও আবাসিক হলের রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখিয়ে তবেই হলে উঠার অনুমতি পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।
করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ ১৯ মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে আবাসিক হলের দুয়ার। শাবিপ্রবির আবাসিক হলগুলো ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সংবলিত মাস্ক, ফুল, কলম, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বরণ করে নিচ্ছে হল কর্তৃপক্ষ। হলের গেইটেই মাপা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা। কমপক্ষে এক ডোজ টিকার প্রমাণপত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডিকার্ড ও আবাসিক হলের রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখে হলে উঠার অনুমতি দিচ্ছে প্রশাসন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বরণের উদ্দেশ্যে বেলুন ও ফুল দিয়ে প্রতিটি আবাসিক হল সাজিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ শুধু মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা হলে উঠার সুযোগ পেয়েছেন। আগামীকাল স্নাতক ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হলে উঠার সুযোগ পাচ্ছেন এবং ২৭ অক্টোবর ৩য় বর্ষ, ২৮ অক্টোবর ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবেন।
এ দিকে বেলা ১০টার দিকে শিক্ষার্থীদের হলে প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এসময় উপাচার্য বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমাদের আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ক্যাম্পাসে আবার প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে আসবে। সামনে আরও নতুন নতুন হল হবে। এগুলো সব আধুনিকায়ন করে তৈরি করা হবে।
উপাচার্য আরও বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের এক ডোজ টিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করেছি আমরা। যারা এখনো টিকা নেয়নি সকলকে টিকার আওতায় নিয়ে আসব। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে উঠতে হবে। হলে ওঠার ক্ষেত্রে অবৈধ কোনো শিক্ষার্থীকে স্থান দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে মানা হবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, ক্যাম্পাস খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে পরিচয়পত্র নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে। এসময় তিনি হলে ফেরত শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন থাকতে, হলের শৃঙ্খলা ও নিয়মকানুন মানার কথা বলেন। পাশাপাশি বাইরে বের হওয়ার সময় যাতে মাস্ক ব্যবহার করে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেন।
এ দিকে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় আবাসে (হলে) ফিরে আসায় প্রভোস্টরাও আনন্দিত। তাদের মধ্যেও ফিরে এসেছে চাঞ্চল্যতা। ফিরে এসেছে পুরনো কাজের গতি। শাহপরাণ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান বলেন, শিক্ষার্থীরা আবার হলে ফিরেছে, এতে হল কর্তৃপক্ষ অনেক আনন্দিত। আশা করি সকলেই হলের নিয়মকানুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম বলেন, অনেকদিন পর শিক্ষার্থীরা হলে ফিরছে। এতে আবারও মুখরিত হচ্ছে ক্যাম্পাস ও হলগুলো। ইতোমধ্যে আমরা হলের ডাইনিং ও কিচেন রুম নতুনভাবে সংস্কার করেছি। হলের সৌন্দর্য বর্ধনে চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসস্থলে ফিরতে পারছে বলেই আমরা আনন্দিত। স্মরণকালের সবচেয়ে দীর্ঘ বন্ধের পর অবশেষে ক্যাম্পাসে ফিরতে পারায় স্বস্তি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। বন্ধুবান্ধব সবাইকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে হলের রুমে রুমে যেন চলছে উৎসবের আমেজ। ‘বন্ধু তোকে কতদিন ধরে দেখি না’- বলেই একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে পর মুহূর্তে।
শাহপরাণ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহ নেওয়াজ বলেন, দীর্ঘ ১৯ মাস পর আবার হলে উঠতে পারলাম। বিষয়টি আমাদের জন্য অবশ্যই আনন্দের। বন্ধুবান্ধব সকলকে কাছে পাচ্ছি। তাছাড়া আমরা যারা হলে উঠেছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব। হল কর্তৃপক্ষের মনোরম ব্যবস্থাপনায় আমরা মুগ্ধ। অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আমাদেরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রথম ছাত্রী হলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। আমিসহ বন্ধুবান্ধব যারা আছে সবার মধ্যেই প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। হতাশার অবসান হয়েছে। মনে হচ্ছে পুরনো দিনগুলোর স্বাদ পাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। এরপর ২১ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব আবাসিক হল। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দফায় দফায় বন্ধ হতে থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এরপর চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ দিকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সরকার ঘোষণা দেয়, অক্টোবরেই সকল বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে হবে। এর ফলে গত ৫ অক্টোবর শাবির ১৬৭তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ২৫ অক্টোবর হল খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া আগামী ২ নভেম্বর থেকে সশরীরে পাঠদান শুরু করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ওডি/নিমি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড