• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নদীর গতিপথ পরিবর্তনে উৎপাদন কমছে ইলিশের

  শাহীন সরদার, বাকৃবি প্রতিনিধি

২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৪:৫৫
ইলিশ
নদীর গতিপথ পরিবর্তনে ইলিশের মোট উৎপাদন ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ বলে আশঙ্কা করেছেন গবেষকরা (ছবি : সংগৃহীত)

ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীতে প্রথম। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনে ইলিশের মোট উৎপাদন ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ বলে আশঙ্কা করেছেন গবেষকরা। গত ৫০ বছরের পদ্মা নদীর গতি পরিবর্তন এবং সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ’ জার্নালে প্রকাশিত ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যানথ্রোপজেনিক ইন্টারফিয়ারেন্স ফর দ্য মরফোলজিক্যাল চেঞ্জেস অব দ্য পদ্মা রিভার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ও বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিরি) ৬ জন গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণাটির প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন বাকৃবির অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম, সহযোগী গবেষক হিসেবে বাকৃবির অধ্যাপক ড. কাইজার আহমেদ সুমন, বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, বিএফআরআইয়ের ইলিশ জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রধান মো. আবুল বাশার, বিরি’র উব্ধর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মিলন ও বাকৃবির স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সিরাজুম মুনীর।

গবেষকরা দীর্ঘ ৩ বছরের গবেষণায় দেখেন গত ৫০ বছরে পদ্মা নদীর পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। গত ৫০ বছরে অতিবৃষ্টি, উষ্ণায়ন, পলি পড়ার মাত্রা বৃদ্ধি ও দখল-দূষণসহ নানাবিধ কারণে পদ্মা নদী তার চিরচেনা চেহারা প্রায় হারিয়ে ফেলছে। নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। গবেষকদের ভাষ্যমতে, নদী গতি পরির্বনের সঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি ও পলি জমে যাওয়ার কারণে পদ্মায় এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। মাছের বংশ বিস্তারে তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে মাছের ডিম ছাড়ার সময়। এর মধ্যে সামান্যতম তারতম্য হলে তা মাছের বংশ বিস্তারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে বলেও জানান তারা।

প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণ বিশেষ করে নানা অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং দখল-দূষণ নদীটিকে পরিবেশগতভাবে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিককালে পদ্মা নদীতে ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে, যা নদীতীরবর্তী জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। স্থানে স্থানে নদী সংকুচিত হয়ে পড়ায় মাছের পরিমাণ ক্রমেই কমছে। বিশেষ করে ইলিশের উৎপাদন যে হারে বাড়ার কথা ছিল, সে হারে তো বাড়েইনি বরং কমেছে।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতেও দেখা যাচ্ছে এ নদীর চ্যানেল অস্বাভাবিক হারে পরিবর্তিত হয়েছে। গবেষকরা আশংকা করছেন যে হারে পদ্মা নদী পরিবর্তিত হচ্ছে তা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ইলিশ উৎপাদনের ওপর ব্যাপকহারে প্রভাব ফেলবে। আর এ কারণে গবেষকরাও নতুন করে পদ্মা নদী থেকে শুরু থেকে ইলিশ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নদীগুলোকে বাঁচানোর তাগিদ দিয়েছেন।

গবেষকদলের প্রধান বাকৃবির অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, পদ্মা মূলত সর্পিল নদী, এঁকেবেঁকে চলাই এর প্রধান কাজ। কিন্তু আবহাওয়া এবং নদীর ক্ষয় ও পলি জমার কারণে এটি অনেকটা চুলের বিনুনির আকার ধারণ করেছে, অর্থাৎ অনেক শাখানদী সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে জোয়ারের উচ্চতা থাকে বেশি। একই সঙ্গে উজান থেকে নিচের দিকে পানির প্রবাহও বেশি থাকে। সামনের দিনগুলোয় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি, বন্যার পানির তীব্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে উজানের পানিপ্রবাহেও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে পলি জমা ও পাড় ক্ষয়ের কারণে বন্যার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ নদীকে ঘিরে মানুষের জীবনযাত্রার নানা বৈশিষ্ট্যও খুঁজে দেখেছি। একই সঙ্গে এ নদীর অন্যতম প্রধান মাছ ইলিশের আবাসস্থল ও মাছকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার স্বরূপও বিশ্লেষণ করেছি। গবেষণার তথ্যগুলো ব্যবহার করে সরকার ও ইলিশ উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে পারবে বলে আশা রাখছি।

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড