খান রফিক, বরিশাল
মধ্যরাতে মেসে ঢুকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বাস শ্রমিকরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৩ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটের রুপাতলী এলাকার ওই মেসে ঢুকে শ্রমিকদের এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে গুরুতর অবস্থায় আহতদের বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতের দিকে শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। ফলে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার জেরে এই হামালার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দৈনিক অধিকারকে বলেন, তিনি এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিপনের নেতৃত্বে মানিক ও মামুন তার দলবল নিয়ে বরিশাল রুপাতলী হাউজিংয়ের আবাসিক এলাকার ১৯, ২২ ও ২৩ নম্বর রোডে অবস্থিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেসের সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে ধারালো চাপাতি, রামদা, রড দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শেখ সজিব, মিরাজ, ইমন, দোদল ফরাজী ও মাহবুবুর রহমান, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম ও ফজলুল হক রাজিব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলিম সালেহী, রসায়ন বিভাগের সোহানুর সোহান, তানিম, বাংলা বিভাগের রাজন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নূর উল্লাহ সিদ্দিকি এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের আলী হোসেন। তারা বুধবার ভোররাতে শেবাচিম মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
এ দিকে, হামলার খবর মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে শিক্ষার্থীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ইট পাটকেল ছিটিয়ে অবরোধ করে রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে জড়ো হয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। ফলে শতশত বাস মহাসড়কের দুই পাশে আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, রুপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার হোসেন শিপন ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. সিয়াম দৈনিক অধিকারকে বলেন, সহপাঠীদের যখন শ্রমিকরা মারধর করে তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। হামলার পর পুলিশ সক্রিয় হয়।
তিনি বলেন, এর একটা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন : দ্রুত টিকা নিন, নিরাপদ থাকুন : ইবি উপাচার্য
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস দৈনিক অধিকারকে বলেন, তিনি রাতেই কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে ছাত্রদের পাশে ছুটে গেছেন। মঙ্গলবারের ঘটনার জেরে ছাত্রদের ওপর এই হামলা হয়েছে।
রাতের আধারে এমন ঘটনা দু:খজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়ক অবরোধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজেই এ বিষয়টি দেখভাল করছেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিআরটিসি বাস শ্রমিক রফিক কর্তৃক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে রুপাতলী এলাকায় লাঞ্ছিত ও মারধরের জেরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে অভিযুক্ত রফিককে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড