• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কিছু টুকরো স্বপ্ন

  আরিশা সালসাবিল

০১ জুলাই ২০২০, ২০:২৫
ঢাবি
ছবি : সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকে শুনেছি জীবনে নাকি তিনটা ধাপ আছে। ১. এসএসসি ২. এইচএসসি ৩. টিএসসি

পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়ার কারণে পরিবারের আশা হয়তোবা একটু বেশি ছিল আমার কাছে। এছাড়া অন্য একটি কারণ ছিল আর তা হল আমার বাবার রিটায়ারমেন্ট। সুতরাং পরিবারের একটি অনিশ্চয়তা ছিল যে, রিটায়ারমেন্ট পর ছোট মেয়েকে কিভাবে পড়ার খরচ দিবে! সব সময় একটি কথাই বাবা-মাকে বলতে শুনতাম, ‘ইস ছোট মেয়েটাকে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারতাম!’

হ্যাঁ বাবা মায়ের এই আশার পিছনে কারণ ছিল দুইটি। ১. কম খরচে পড়ানো যাবে (মধ্যবিত্ত পরিবার) ২. সামাজিকভাবে বাবা-মা সম্মান পাবে মানুষের কাছে।

কিন্তু সবার প্রশ্ন ছিল একটাই, ‘স্বপ্ন কি আসলেই সত্যি হবে?’

যখন রামপুরার সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল রঙের বসন্ত বাস দেখতাম, লোকাল বাসের ভেতর থেকে ঘামে জর্জরিত হয়ে ঝুলতে ঝুলতে স্বপ্ন দেখতাম একদিন এই লাল বাসের সিটে বসে বসে যাব। লাল বাসটি যতবার চোখের সামনে আসতো ততবার স্বপ্ন দেখতাম লাল বাসে চড়ার।

আবার পহেলা_বৈশাখ সহ নবান্ন বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে যখন টিভিতে দেখতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কত রকমের অনুষ্ঠান হচ্ছে, মনে মনে খুব ইচ্ছা হতো যদি আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পারতাম! তাহলে নিজের ক্যাম্পাস মনে করে এগুলো তে যেতে পারতাম।

হয়তো বা কিছুটা নাক-উঁচু স্বভাবের মেয়ে ছিলাম বলেই কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার আগে সেখানকার কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি। বরাবরই মনে হতো যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব ঠিক সেদিনই নিজের ক্যাম্পাস মনে করে সেখানকার উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ করব। এভাবে প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে যেতাম। সামর্থ্য হয়তো কম ছিল কিন্তু স্বপ্ন গুলো ছিল অনেক বড়।

স্কুল কলেজের বন্ধুরা ঠাট্টার ছলে কিনা জানিনা হয়তো আমার চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা টি দেখি বলতো, ‘ওই যে আমাদের ফিউচার ঢাবিয়ান এসে গেছে। মনে মনে ভাবতাম আদৌ কি সম্ভব আমার দ্বারা!’

খুব যে ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম তা কিন্তু না, কিন্তু হ্যাঁ মনের মাঝে ছিল অফুরন্ত আশা এবং স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখতাম বাবা মা একদিন তাদের ছোট মেয়ের পড়ার খরচ কিভাবে চালাবে সেই চিন্তা থেকে মুক্তি পাবে।

কিভাবে যেন স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল। যেদিন প্রথম ওই লাল বাসটিতে উঠলাম, মনে হচ্ছিল বাইরের পৃথিবীটা হয়তো আমাকে দেখছে আর ঈর্ষা করছে। তারাও হয়তো বাইরে থেকে ঠিক আমারই মতন স্বপ্ন দেখছে একদিন ওই লোকাল বাসের ভিড় ছেড়ে লাল বাসের ভিড়ে নিজেদের আলাদা জায়গা করে নেওয়ার।

যেদিন প্রথম ভাইবা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থী হয়ে গেলাম সেদিন বাসার সবাইকে খুব গর্ব করে বলেছিলাম, ‘চলো সামনের শুক্রবার আমার ক্যাম্পাসে ঘুরে আসি। তোমাদের সবাইকে আমি হাকিমের খিচুড়ি খাওয়াবো।’

আরও পড়ুন : মেস ভাড়া মওকুফে কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

স্বপ্নগুলো কি সুন্দর করে সত্যি হয়ে যায় তাই না!!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস এখন যেন আমার হয়ে গিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থান, প্রতিটি ক্লাস রুম, সুইমিং পুলের কনসার্ট, টিএসসির কলরব, স্বপন মামার টংয়ের আদা মেশানো চা, শেডোর সামনের ওই কৃষ্ণচূড়া গাছ, চারুকলার উৎসব, ঢাবির ১২ মাসের ১৩ পার্বণ সবকিছু যেন একান্তই আমার হয়ে গিয়েছে।

এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাস আমার, এই পুরো ক্যাম্পাস আমার। শুভ জন্ম শতবার্ষিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড