মো. আশিকুর রহমান, গবি প্রতিনিধি
ইদ মানেই খুশি, ইদ মানেই আনন্দ! চির পরিচিত এই লাইনটি এবারের জন্য প্রযোজ্য নয়। করোনার আক্রমণে ইদের আনন্দ আজ বাতাসে উড়ে বেরানোর পরিবর্তে চার দেয়ালের মাঝে শুধু নৃত্য করছে!
সারা পৃথিবীতে যখন বইছে মৃত্যুর মিছিল তখন কেমন ইদ পালন করছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা তা বিস্তারিত জানাচ্ছেন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং দৈনিক অধিকারের প্রতিনিধি মো. আশিকুর রহমান।
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহতাবুর রহমান সবুজ বলেন, ‘করোনা আতঙ্কের মধ্যেই আমাদের মধ্যে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ইদ-উল-ফিতর এসেছে। আমাদের ইদের আনন্দটা কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা হয় না। ইদের দিন যদি সময় না পাই তাই রাতেই ইদগাহ পরিষ্কার করা, রাস্তার গাছ এবং দেয়ালে ইদ মোবারক লিখে রাখা, সেইদিনগুলি ফিরে আর আসবে কি কখনও? প্রতিবছর যে আনন্দ চিরচেনা নতুন জামা পড়ে, বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, ইদের জামাত, কোলাকুলি, আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া, সালামি যা থাকবে এবার বাকির খাতায়, সবকিছুই অনুপস্থিত এবারের ইদে। সেটা এবার থাকবে চার দেয়ালে বন্দি।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি এতে হতাশ হবার কিছু নেই, আনন্দ উদযাপনের ধরণ নানা রকম হতে পারে । এবার শুধু ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গেই আনন্দ করব। কারণ নিজের এবং আপনজনের সুরক্ষা সবার আগে। আমি মনে করি, আমার পরিবার সুস্থ থাকলে আমার মহল্লা সুস্থ থাকবে একইভাবে মহল্লা সুস্থ থাকলে বাংলাদেশ সুস্থ থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের খবর নেওয়া হবে। ছবিতে ছড়াবে এবারের ইদ। '
কথা হয় কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী (সিএসই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা আফরিনের সঙ্গে। তিনি জানান, ইদ মানেই আমরা বুঝি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, আত্মীয়ের বাসায় আসা-যাওয়া, পুরো পথঘাট জুড়ে থাকবে খুশির আমেজ। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে সব কিছুতেই পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এ বছর সেটাই মেনে নিতে হবে। এবার আনন্দ না হয় ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গেই হোক। বাস্তবিক না হয়ে ইদ আড্ডাগুলো ভার্চুয়ালি হোক। ইদের আনন্দগুলো এ বছর না হয় ঘরের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকুক। পরিবার পরিজন নিয়ে সুস্থ আছি এবার এটাই ইদের আনন্দের বাণী।
এই ইদে নিজস্ব পরিকল্পনা ও কাজ নিয়ে জানিয়েছেন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ বাপ্পি। তিনি জানান, এই ইদে আমার গ্রামের যারা অসচ্ছল পরিবার তাদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল। সেজন্য আমি ১৫০টা পরিবারকে ইদ উপহার পৌঁছে দিয়েছি এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের ইদের সমস্ত বাজার করে দিয়েছি, করোনা মহামারির কারণে এবার ইদটা ব্যতিক্রম কাটছে। প্রতিবছর বাইরে যাওয়া হয় এবার সেটা হচ্ছে না, এতে যদিও খারাপ লাগছে তারপরেও বাসায় থেকেই ইদ উদযাপন করবো।
আরও পড়ুন : বেরোবি শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
ব্যতিক্রমধর্মী এই ইদ সম্পর্কে আরও জানান প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম রিমন। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা যে একমাস সিয়াম সাধনার পর আমরা পবিত্র ইদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে পারছি । যদিও এবারের ইদ উদযাপন একটু ব্যতিক্রম ছিল কেননা আমরা সবাই জানি করোনাভাইরাসের কারণে আমরা কঠিন একটি সময় পার করছি। প্রতি বছর হয়তো ইদের নামাজের পর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া হয়। এবার হয়তো সেগুলো করতে পারছি না। কারো সঙ্গে হয়তো দেখা করতে চাইলেও দেখা করা যায়নি তাদের সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে মেসেজের মাধ্যমে এই ইদের আনন্দ শেয়ার করেছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছি আল্লাহ যেন আমাদের এই কঠিন সময় থেকে মুক্তি দেয়, করোনাভাইরাস নামক মহামারী থেকে যেন সমগ্র বিশ্বের মানুষকে মুক্তি দেয়।
করোনার এই সংকটকাল কাটিয়ে আগামী ইদগুলো ফিরে আসুক তার আপন মহিমায়। ইদের বিশেষ আনন্দ কোলাকুলিতে সেটিও এবার ঈদে করতে পারছে না মানুষ। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ইদ কেউ পালন করেনি কখনো! সব মহামারী ও বিপদ কাটিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের মুখে ফুটুক করোনা জয়ের হাসি এটিই সবার প্রত্যাশা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড