• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অনলাইন ক্লাস নিয়ে গবিতে কানামাছি খেলা

  মো. আশিকুর রহমান, গবি প্রতিনিধি

১৮ মে ২০২০, ১৬:১৯
গবি
অনলাইন ক্লাস (ছবি : সংগৃহীত)

সারাবিশ্ব আজ করোনার কবলে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষায় গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ আছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি কমাতে ও সেশনজট এড়াতে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৯ এপ্রিল অনলাইনে ক্লাস গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকে স্বল্প পরিসরে চালু হয় অনলাইনে পাঠদান। চারিদিকে যখন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, তখন কেমন চলছে গবির অনলাইন ক্লাস তার বিস্তারিত জানাচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং দৈনিক অধিকারের প্রতিনিধি মো. আশিকুর রহমান।

সূত্রমতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুরুতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই সন্তোষজনক ছিল না। তবে মে মাসের শুরুতে বাড়তে শুরু করে ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। এজন্য প্রশাসনের তৎপরতাকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

শুরুতে ক্লাসে অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে জানা যায়, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ছুটির কারণে এখন গ্রামে অবস্থান করছে। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা এখনো যথেষ্ট দুর্বল। আবার সিম কোম্পানিগুলোর মোবাইল ডাটা ক্রয় করে নিয়মিত ক্লাসে যোগদান করা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী দূরদর্শিতার অভাবে প্রয়োজনীয় বই, শিট খাতাপত্র বাসায় নিয়ে আসেনি। এসব কারণে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম বলে জানা যায়।

তবে সম্প্রতি অনলাইন ক্লাসে যোগদানের জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান অনেক শিক্ষার্থী। ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষকেরা আমাদের যথাসময়ে সেমিস্টার শেষ করার অংশ হিসেবে যে কোনো উপায়ে ক্লাসে যোগদানের জন্য বলছেন। আমাদের বাকি থাকা ক্লাস টেস্ট ও মিডটার্ম পরীক্ষার সম্পন্নের জন্য বিকল্প পন্থায় যাচ্ছেন তারা। এমতাবস্থায় নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের নির্দেশ মানতে হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনলাইন ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের প্রধান মো. করম নেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে আগে থেকেই জ্ঞান রয়েছে। তাই এমন অবস্থাতেও আমরা অনলাইন ক্লাসে (৫০-৬০) শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখতে পেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীর বাড়ি দূর-দূরান্তে। তাই নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে অনেকেই ক্লাস করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে মেইল বা অন্য কোনো মাধ্যমে কানেক্ট করার চেষ্টা করছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের সিলেবাস ইতোমধ্যে শেষ। অনলাইনে এখন তাদের রিভিশন ক্লাস চলছে।’

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের ক্রাইসিস মোমেন্টগুলো ছাড়াও অনলাইন ক্লাস নেওয়া হয়। এটা অনেক বেশি ইন্টারেক্টিভ। এখানে পিডিএফ সহ পাওয়ার পয়েন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমেশন দেখানো যায়। যেটা একটা সাধারণ মানের ক্লাস রুমে দেখানো সম্ভবপর নয়। এজন্য দুর্যোগ পার হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের অনলাইন ভিত্তিক ক্লাসের প্রতি জোর দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা প্রচুর আগ্রহ নিয়ে আমার ক্লাসগুলো করছে। ডাটা সমস্যা তেমন কোনো সমস্যা নয় এবং যাদের নেটওয়ার্ক দুর্বল তারাও অনলাইন সাপোর্ট নিতে পারে। ডেটা খরচ খুব বেশি হয়না। দেশের পরিস্থিতির কথা ভেবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মূলকথা হচ্ছে, কোনোভাবেই আমাদের সেমিস্টার ব্রেক দেওয়া চলবে না।’

শিক্ষকরা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করলেও যাদের জন্য এই অনলাইন ক্লাসের আয়োজন, তারা বলছেন ভিন্ন কথা। ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পবিত্র কুমার শীল বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস মোটেও আকর্ষণীয় নয়। বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক সময় ক্লাস মিস হয়। যে জুম সফটওয়্যারে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে তা সবার মোবাইলে সাপোর্ট করে না। আবার সাপোর্ট করলেও লকডাউনের ভেতর শতশত টাকার ডাটা কেনা পরিবারের ওপর নতুন বোঝা।’

তাঁর অভিমত, অনলাইনে (২৫-৩০) শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশি যুক্ত হচ্ছেনা। ফলে বাকিরা পিছিয়ে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গরীব শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে অনলাইন ক্লাস বন্ধ করবে।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বহনযোগ্য ভেন্টিলেটর মেশিন উদ্ভাবন

মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিহা হাসান বলেন, ‘খাতা কলমে বা বোর্ডে ক্লাসের বিপরীতে শুধু ভয়েস কলে ক্লাস করা বা মোবাইলে ভিডিও কনফারেন্স খুব একটা কার্যকরী নয়। দুর্বল শিক্ষার্থীরা কিছুই বুঝে না, তার ওপর নেটওয়ার্ক সমস্যা। এমন ক্লাসের ওপর ভিত্তি করে যদি পরীক্ষা নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে সেটা হবে দারুণ ক্ষতিকর।’

এতসবের সমস্যার মধ্যেও ইতিবাচক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘরে বসে অলস সময় পার করার চেয়ে অনলাইনে ক্লাস করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কিছুটা উপকৃত হলেও আমাদের সার্থকতা। প্রধানমন্ত্রীর দেশকে ডিজিটালাইজেশন করার অংশ হিসেবেই এ উদ্যোগ। ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই অনলাইনে ক্লাস চলমান রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল বলেন, ‘বর্তমানে অনলাইনে যুক্ত নয়, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত এবং সেশনজটের কথা চিন্তা করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমি বলবো, অন্তত সিস্টেমের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার জন্যও শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সকলকে এটা ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড