• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে গবি শিক্ষার্থীরা

  মো. আশিকুর রহমান, গবি প্রতিনিধি

০৮ মে ২০২০, ২২:৪৭
গবি
ছবি : সম্পাদিত

পৃথিবী আজ যেন মানবশূন্য! চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল। মহামারি করোনাভাইরাস মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে ধস নামিয়ে দিয়েছে।

উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্তরা হয়ে যাচ্ছে নিম্নবিত্ত! আর নিম্নবিত্তবানরা যে কি হচ্ছে তা সবার বুঝার বাকি নেই! এমন অবস্থায় বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই অনেকেই টিউশনি করে তাদের বাসা ভাড়া ও হাত খরচ চালাতেন। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের দরুন গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার ফলে তাদের অনেকের সাধারণ জীবনযাপন যেখানে কষ্টকর, সেখানে বাসা ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী।

ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর কেমন যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থা। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বিষয় কমন পাওয়া যায় তা হলো বাসা ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা।

এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী হ্লা মং উ মারমা বলেন, ‘আমরা যারা দুর্গম এলাকা থেকে পড়াশোনা করতে আসি বিগত বছরের তুলনায় এই কয়েক মাসে অনেক পিছিয়ে গেছি। এমনিতেই লকডাউন সারাদেশ, আবার থানচি অগ্নিকাণ্ডের কথা নিশ্চয়ই সবাই শুনেছেন। এমন অবস্থায় বাসা ভাড়া দেওয়াটা বাড়তি বোঝা। আমার আহ্বান এবং অনুরোধ এই পরিস্থিতিতে সকল শিক্ষার্থীর বাড়ি ভাড়া মওকুফ করানো হোক।’

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজুম আক্তার বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ থেকে নিজ পরিবারের সঙ্গে গ্রামে অবস্থান করছি। আমাদের পরিবার সবাই গ্রামের সাধারণ কৃষক। পড়াশোনা খরচ চালানোর একমাত্র উৎস কৃষি কাজ। পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করে নিজের খরচ চালাই। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশে সকলেই ঘরবন্দী হয়ে আছি। এরই মধ্যে বাসার মালিক গত কয়েক মাসের বাসা ভাড়ার জন্য আমার ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। পরিবারের খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি সবাই। সেখানে এই বাসা ভাড়ার টাকা বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এই বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য করেন ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান উল করিম। তার মতে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন বন্ধ আছে। আবার কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে সেটিও এখন নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই টিউশন করে জীবিকা নির্বাহ করি। এখন আমাদের টিউশন ও নাই যার কারণে বাসা ভাড়া দিতে রীতিমত কষ্ট সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

কথা হয় ফিজিওথেরাপি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইয়েদ আফ্রিদির সঙ্গে। তিনি বলেন, মহামারির এই মুহূর্তে অনেক পরিবারের আয়ের পথ বন্ধ। তাদেরকে এখন শেষ সঞ্চয় দিয়ে চলতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে সঞ্চয় হতে সম্পূর্ণ বাসা ভাড়া দেওয়াটা অযৌক্তিক। বেশিরভাগ জেলা লকডাউন হয়ে আছে। বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাহিরে যেতে হয়। এই ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক দের অনুরোধ করব সকলের সমস্যা বিবেচনা করে বাসা ভাড়া মূল টাকা হতে কমিয়ে অর্ধেক নিন এবং যাদের সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে শিথিল করুন।’

আরও পড়ুন : ময়মনসিংহ জেলা পুলিশকে ফেস শিল্ড দিল বাকৃবি

এ বিষয়ে আরও কথা হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ফার্মেসি বিভাগের বিভাগীয় প্রতিনিধি শর্মীলা ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থীই টিউশন করে তাদের বাসা ভাড়া চালায়। আবার কারো কারোর পরিবার অর্থ উপার্জন করে দিনমজুরি করে। করোনা মহামারির লকডাউনে সেসব পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব শিক্ষার্থীর পক্ষে বাসা ভাড়া দেয়া নিঃসন্দেহেই কষ্টসাধ্য। তাই সেসব শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তাদের বাড়িওয়ালারা যদি তাদের ভাড়া মওকুফ করে তাহলে তারা উপকৃত হবে।’

করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাচতে সরকার কয়েক দফায় ছুটি বৃদ্ধি করেছে। সর্বশেষ এ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ব্রিফিং অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির মেয়াদকাল, যা শিক্ষার্থীদের ওপর সৃষ্টি করছে বাড়তি চাপ। বাসা ভাড়া মওকুফ ও খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরার প্রত্যাশা এখন সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড