রাকিবুল হাসান তামিম, ডিসি প্রতিনিধি
করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী সৃষ্ট অর্থ সংকটের দরুন রাজধানীর সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাসা/মেসসমূহের ভাড়ার বিষয়ে বাসা ও মেস মালিকদের সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
দৈনিক অধিকারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ বলেন, ‘এই সংকটপূর্ণ সময়ে মেস মালিক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সহনশীল হতে হবে। কেননা এখন সকলেই ঘরে অবরুদ্ধ। অনেক শিক্ষার্থী নিজের খরচের অর্থ নিজেই সংগ্রহ করে। তারা এখন ঘর থেকেই বের হতে পারছে না। আর অনেক অভিভাবকের রোজগারও বন্ধ। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভাড়ার বিষয়টি মালিকদের মানবিক বিবেচনায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে অবশ্যই মালিকদের অবস্থার কথাও চিন্তা করতে হবে। তাদের উপর জোরপূর্বক কোনো সিদ্ধান্ত চাইলেই চাপিয়ে দেওয়া সমীচীন নয়। কারণ অনেকের পরিবার পরিজনের ভরণপোষণও এই ভাড়ার টাকা থেকেই আসে। তাই মালিক পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাবো, যেন সবাই সবার সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন।’
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা কলেজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ২০ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এর মধ্যে কলেজের ৭টি হল মিলে মাত্র সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে। আর ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিবার পরিজনের সাথে থাকছে ৩ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। বাকি ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে ভাড়া মেসে/হোস্টেলে/বাসায় থাকতে হয়।
মেসে থাকা ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়া মওকুফের দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনার ফলে সংকটের এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মেস ও বাসা ভাড়া। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে মেস ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মালিকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত এবং কৃষক পরিবারের সন্তান। আর মেসে অবস্থান করা এসব পরিবারের অধিকাংশ সন্তানই টিউশনি অথবা পার্ট টাইম চাকরি করে নিজেদের পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ করে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির জন্য সবকিছুই স্তিমিত। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে এই সংকটময় সময়ে শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়েছে তারা। তবে এক্ষেত্রে ভাড়া পুরোটা কমানো সম্ভব না হলেও অর্ধেক কমানো হলেও এতে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের এই সময়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ক্যাম্পাস বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে আমি বাড়িতে চলে এসেছি। এমন সংকটময় মুহূর্তে আয় রোজগার সব বন্ধ। তাই এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ওপর মানবিক দিক বিবেচনায় মেস মালিকদের ভাড়া মওকুফ অথবা শিথিল করা উচিত।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক মেস মালিক ভাড়া আদায়ের জন্য শিক্ষার্থীদের নানা ভাবে চাপ দিচ্ছেন। অভিভাবকদের আয় বন্ধ হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী তাদের মেস ভাড়া পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছেন না। এমন অবস্থায় মালিকদের উচিৎ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো।’
ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আহমেদ সৌরভ বলেন, ‘আমরা অনেকেই টিউশন বা খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজের পড়াশোনার খরচ নির্বাহ করি। এর মধ্যে আবার অনেকে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারও চালান। কিন্তু করোনা মহামারিতে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। একদিকে পরিবারের আয়-রোজগার বন্ধ অন্যদিকে মেসের ভাড়া পরিশোধের চাপে দিশেহারা অবস্থা।’
ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন মাহী বলেন, ‘আমরা এক সংকটময় অবস্থায় আছি। এমন অবস্থায় পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সকল মেস মালিকের প্রতি মেস ভাড়া মওকুফ করার জন্য মানবিক আবেদন জানাই। মানুষ বাঁচলে তবেই তো দেশ বাঁচবে। সব মালিকদের উচিৎ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ চিন্তা করা।’
এছাড়াও এমন অবস্থায় মেস মালিকদের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ বলে মনে করছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার। তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী নিজের খরচের টাকা নিজেই জোগাড় করে। অনেকের পরিবার অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। তাই মানবিক বিবেচনায় ভাড়া মওকুফ অথবা শিথিল করা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন : ঢাবিতে অনুষ্ঠিতব্য এমবিবিএস-বিডিএসের পরীক্ষা স্থগিত
শিক্ষার্থী অধ্যুষিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ. স. ম. ফেরদৌস আলম বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু মেস ভাড়া মওকুফের ব্যাপারে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি। আর আমাদের পক্ষ থেকে জোরপূর্বক কারো ওপর কোনো নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ মেস মালিকের কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরে এর সমাধান করে নিতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সকলের উচিৎ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো।
প্রসঙ্গত, বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বন্ধ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মেস ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড