• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনায় সুনসান তিতুমীর

  মামুন সোহাগ, জিটিসি প্রতিনিধি

২১ মার্চ ২০২০, ১২:৫৬
জনশূন্য ক্যাম্পাস
জনশূন্য ক্যাম্পাস (ছবি : সংগৃহীত)

শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ কলেজ ক্যাম্পাস রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ। যেখানে বছর ধরেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, আড্ডার ফুলঝুরিতে মুখরিত হতে থাকে গোটা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে পুরো ক্যাম্পাস এখন সুনসান।

ক্লাস পরীক্ষার পাশাপাশি বন্ধ হয়েছে শিক্ষার্থী হলগুলোও। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল শিক্ষার্থীকে সচেতন আর সতর্কে থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর এবং সংক্রমণে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির খবরে ঢাকার রাস্তা-ঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ভেতরেও বিরাজ করছে আতঙ্ক আর চরম শঙ্কা। অনেকেই ফিরে গেছেন আপন নীড়ে, পরিবার পরিজনের পাশাপাশি থেকে দুঃসময়ের সঙ্গী হতে চাওয়া সবারই তেষ্টা।

জনশূন্য তিতুমীর কলেজের মেইন গেটের সামনে নেই কোনো কোলাহল, নেই হাত উঁচিয়ে বাস থামানোর প্রতিযোগিতা। মেইন গেট থেকে বিজ্ঞান ভবনে কিংবা দ্বিতীয় গেটে যেতে পথে যতগুলো গোলচত্বর আর বসার জায়গা আছে কোথাও টু শব্দ নেই। দেশের এমন উদ্ভূত পরিবেশ মোকাবিলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্ধ হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার ফলে লোকারণ্য ক্যাম্পাসে ভর করেছে শূন্যতার হাহাকার।

কলেজের শহীদ আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাস ও শহীদ সিরাজ ছাত্রীনিবাস এবং সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাস বন্ধ হওয়ায় কলেজ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। কেউ গ্রামের বাড়িতে, কেউবা ঢাকাস্থ আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন। তবে করোনা সংকট মোকাবিলায় ক্লাস, হল ছুটি ভালো কিছুর ইঙ্গিত বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

খেলার মাঠের হইহই উচ্ছ্বাস, বিজয় বিতর্ক মঞ্চের কলতান, ছাত্রলীগ চত্বরের ঝাঝালো স্লোগান, গোলচত্বরের মুখরিত পরিবেশ, বেলায়েত চত্বরের নীরব আড্ডা, ২ নম্বর গেটে বসে চায়ে চুমুক, শাকিল চত্বরের গরম ভাপ ওঠা সিঙাড়া সমুচা কিংবা গোটা ক্যাম্পাসের মুখর থাকা কলরব সবই মিস করছে শিক্ষার্থীরা। সব যেন জনমানবশূন্য থমথমে রূপ ধারণ করে আছে অজানা কোনো আশংকায়। একাকী ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তিতুমীরিয়ানদের আড্ডামুখর ফুটওভার ব্রিজটিও। শুধু তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসই নয় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে যেন জনশূন্য হয়ে উঠেছে সমস্ত মহাখালীসহ ঢাকা।

চত্বরে নেই কোলাহল (ছবি : সংগৃহীত)

এ নিয়ে কথা হয় তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ ফেরদাউস খান বলেন, ‘করোনা ভাইরাস যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, সেহেতু কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ধারণা করা হচ্ছে কিছু দিন পর এর প্রকোপ থেমে যাবে। আশা করছি, সরকারি তিতুমীর কলেজ আগের মতোই আবার হেসে উঠবে। আমরা কোনো খারাপ খবর শুনতে চাই না। যে কারণে কলেজ বন্ধ করা হয়েছে শিক্ষার্থীরা যেন সেটার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে। ডাক্তারদের বলে দেওয়া নিয়মনীতি মেনে চলার জন্য সবাই আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে করে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।’

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার তন্বী বলেন, ‘ছুটি সবসময় আনন্দের হলেও এবার তা বিষণ্ণতার। ক্যাম্পাসের চিরচেনা রূপ হারিয়ে গেছে। সবার মনে ছুটি শেষে প্রিয় মুখগুলো দেখতে পাব কি পাব না সেই শঙ্কা।’

সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী শামিম হোসাইন বলেন, ‘পৃথিবীর এই ক্লান্তি লগ্নে, আমাদের উচিত যার যার জায়গা থেকে মানুষকে সচেতন করা, একমাত্র সচেতনতাই এই মহামারি থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর তিতুমীর কলেজ একটা আবেগের জায়গা এইভাবে হুট করে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাবে কেউ ভাবিনি। তবে আমি বিশ্বাস করি খুব তাড়াতাড়ি এই মহামারি থেকে পৃথিবী মুক্তি পাবে এবং আমরা আবার আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে যাব। আবার আড্ডা দেব। সবার সমাগমে মুখরিত হবে ক্যাম্পাস।’

আরও পড়ুন : চলতি বছরেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ‘ডোপ টেস্ট’

রসায়ন বিভাগের তাহরিমা মেহজাবিন বলেন, ‘উপমহাদেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ আমাদের তিতুমীর। শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশে আমরাই বেশি। সারাদিন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকত ক্যাম্পাস। এখন শূন্য। শুধু আমরা না, ক্যাম্পাস ও যেন আমাদের মিস করছে। কিন্তু পড়াশোনার চেয়ে জীবন আগে। আল্লাহ সবাইকে রহমত করুন। সবাই সুস্থভাবে প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরব এই প্রত্যাশা করছি।’

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আশরাফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে দেশের বৃহত্তর এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে তোমরা যত্রতত্র চলাফেরা না করে নিরাপদে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে। তোমরা শিক্ষিত তরুণ, তাই নিজ এলাকায় এই সংক্রামক মহামারি রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে তোমরা ভূমিকা রাখতে পারবে। যার শুরু হবে তোমাদের পরিবার থেকে। নিজেরা সচেতন থাকো, অন্যদের সচেতন রাখো। সবার সুস্থতা কামনা করি।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড