জাককানইবি প্রতিনিধি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই উদ্বোধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কয়েকজন ছাত্রনেতার অর্থনৈতিক লাভের অভিযোগের পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ৩১ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে উদ্বোধন করা হয় ভাস্কর্যটির।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ছাড় হওয়া বঙ্গবন্ধু ও নজরুলের পৃথক দুটি ভাস্কর্য নির্মাণে কাজ ২০১৯ এর জুন জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সুতিয়া করপোরেশন। ভাস্কর্যটির জন্য মোট বরাদ্দ করা হয়েছিল ১ কোটি ১ লাখ টাকা। এর থেকে শিল্পী শ্যামল চৌধুরীকে দুটি ভাস্কর্য নির্মাণ বাবদ দেওয়া হবে ৫৫ লাখ টাকা।
ভাস্কর্যের দুই বেদি নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪৩ লাখ টাকা। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ৩০ লাখ টাকা।
বেশিরভাগ সময় কাজ বন্ধ থাকার অভিযোগ স্বীকার করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুতিয়া করপোরেশনের মালিক জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন, ‘নকশার পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার তাই আমাদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।’
পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাজ করতে ব্যয় বেশি হচ্ছে, আর এখন দ্রুত কাজ হচ্ছে তাই ব্যয় আরও বেড়েছে। ভাস্কর্যের কাজে শ্যামল চৌধুরী ৫৫ লাখ আর বেদি সংশ্লিষ্ট কাজে সুতিয়া করপোরেশন পাবে ৪৬ লাখ টাকা। তবে এখন ব্যয় বেড়ে প্রতিষ্ঠানটি পাবে মোট ৭৫ লাখ টাকা।’
বরাদ্দকৃত অর্থের বিষয়ে মেসার্স সুতিয়া করপোরেশনের মালিক জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন, ‘কাজের চুক্তি অনুযায়ী ৪৩ লাখ টাকা এবং নকশা পরিবর্তন করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে যুক্ত হবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা।’
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিকল্পনা দপ্তর প্রধানের কথায় ৮ লাখ টাকার অমিল রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাস্কর্য নির্মাণে কয়েকজন ছাত্রনেতা অর্থনৈতিক সহযোগিতা চেয়েছে। সেই সহযোগিতা প্রদান সম্ভব হয়নি বলেই কাজ বন্ধ ছিল, এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।
কারা কাজ বন্ধ রেখেছিল জানতে চাইলে তা প্রকাশে অপারগতা জানান সংশ্লিষ্ট দুই দপ্তর প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও মো. মাহাবুবুল ইসলাম।
উদ্বোধনের পর ফুল দেওয়ার সময় বেদির পলেস্তারা ও বিভিন্ন জায়গার টাইলস খুলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সামনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দীনও বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদার জি এম নূরুল করিম স্বপন বলেন, ‘সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে কাজ শেষ করেছি, ৯টায় অনুষ্ঠান হলে এমন হতেই পারে। আমাদের কাজে কোনো সমস্যা নেই। তবে ভাস্কর্যের পূর্ণ কাজ শেষে আশা করি ভালোই হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজও আটকে যায়! এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর হতে পারে না। আবার বন্ধ থাকার পর কাজ না করে কিভাবে ব্যয় বেড়ে যায়? সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে হীনমন্য এই কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই। সেই সঙ্গে ভাস্কর্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনাগুলোর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে দুদক ও সরকারের তদন্ত করা জরুরি মনে করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমরাও শুনেছি কারা যেন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল, কাজটি নিন্দনীয়। এছাড়া ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি হতে পারে, এই বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এখনো ভাস্কর্যের কাজ শেষ হয়নি এটি সত্য। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।’
অন্যদিকে একই সময়ে শুরু হলেও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্যের নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড