মামুন সোহাগ, জিটিসি প্রতিনিধি
অপরিচ্ছন্নতায় নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শৌচাগারগুলো। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিন সেগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয় হচ্ছে।
পানির ট্যাপ থাকলেও পানি নেই। আবার কোনো কোনো বিল্ডিংয়ের ওয়াশরুমগুলোতে পানির ট্যাপই নেই। বেশিরভাগ শৌচাগার সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের মুখ, নাক চেপে বাথরুমে যেতে হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু। এ দিকে, অধ্যক্ষ দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন।
অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতায় নোংরা থাকার কারণে প্রয়োজন হলেও শৌচাগার ব্যবহার করতে পারছে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে কলেজের শৌচাগার সংক্রান্ত নানান সমস্যা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের চিত্র ধরা পড়ে। নির্মিতব্য দুইটি ১০তলা ভবনের একটির প্রথম দুইটি ফ্লোর চালু করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলার অবস্থা কিছুটা অনুকূলে থাকলেও নিচ তলার অবস্থা একেবারে নাজুক।
সময়ে সময়ে নিচতলার প্রবেশপথে প্রস্রাবের পানি আটকে থাকে। হাটতে গেলে জুতায় এসে লেগে পড়ছে। কর্দমাক্ত কাদাটে পানি জুতায়, পায়েও লাগছে। এর ফলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবেদন সংগ্রহকালে, কলেজের দ্বিতীয় গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই লুঙ্গি পরা একজনকে একটু আবডালে প্রস্রাব করতে দেখা যায়। সেখানকার ঠিক ডান পাশে একটা সাধারণ টয়লেট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভবন নির্মাণে নিযুক্ত শ্রমিকেরা এটি ব্যবহার করে থাকেন।
কলেজের মূল ফটকের সিকিউরিটি রুমে একটি টয়লেট আছে। কলেজের ছেলে-মেয়ে সবাই সেটি গণহারে ব্যবহার করছে। কখনো কখনো টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হচ্ছে।
কলেজের বিজ্ঞান ভবনের নিচ তলার টয়লেটের অবস্থা সবথেকে নাজুক। অন্ধকার পরিবেশে নাক সিটকে ঢুকতে হয়। খুব বেশি সমস্যা না হলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী টয়লেটে যায় না, আবার অনেকেই কষ্ট করে প্রস্রাব আটকে রাখে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে।
প্রতিটি ভবনে ওয়াশরুম, বেসিন ও শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না। কর্তৃপক্ষের সামান্য দেখভাল আর তদারকিতে তিতুমীর কলেজের শৌচাগারগুলো নতুন পরিবেশ ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।
কানিজ ফাতেমা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কলেজ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু ঘাটতিও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রায় সারাদিনই কলেজে থাকে। খুব সাধারণভাবেই তাদের ওয়াশরুম ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিজ্ঞান ভবনের বাথরুমগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সিঁড়ির পাশেই বাথরুম হওয়ায় ভেতরে না ঢুকে এগুলোর অপরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বোঝা যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’
ইবনে নাহিদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের কলেজের প্রতিটা ডিপার্টমেন্টের ওয়াশরুমগুলোর একই অবস্থা। ক্লাসরুমে ঢুকতেই একটা গন্ধ পাওয়া যায়, যা অস্বাস্থ্যকর।’
জেসমিন আক্তার বলেন, ‘মাঝেমাঝে খুবই খারাপ অবস্থা ফেস করি। এত বড় একটা কলেজে এমন অবস্থা থাকবে সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
রবিউল ইসলাম সজল বলেন, ‘মেয়েদের কমনরুমে যে বাথরুম আছে শুনেছি সেটাও অনেকটা ভালো, ব্যবহার উপযোগী। কিন্তু ছেলেদেরটা আরও খারাপ। এগুলো কি কর্তৃপক্ষ দেখে না!’
শামিমা আইরিন নামের একজন বলেন, ‘কলা ভবনের অবস্থা আরও জঘন্য। এতগুলো বছর লেখাপড়া করলাম। এই কলেজেই অনার্স, মাস্টার্স কমপ্লিট করলাম। অথচ এই নোংরা পরিবেশের কারণে এক থেকে দুইদিনের বেশি ওয়াশরুমে যাই নি।’
মোবারক হোসেন শান্ত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগ সংলগ্ন দুই তলার টয়লেটে কোনো ছিটকিনি নেই। কেউ টয়লেটে বসলে অপ্রত্যাশিতভাবে আরেকজন খুলে ফেলে। আর পুরো কলেজে তো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাই নেই।’
তবে দুয়েকটা বিভাগের শৌচাগারগুলোর অবস্থা ভালো। এর মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ উল্লেখযোগ্য। সেখানে নোঙরা স্যাতসেতে পরিবেশ একেবারেই নেই।
আরও পড়ুন : অনির্দিষ্টকালের জন্য বুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন
শৌচাগার সমস্যা নিয়ে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন দৈনিক অধিকারকে জানান, ওয়াশরুমগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি সবসময়ই। চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা যাতে কাটিয়ে ওঠা যায়।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, ‘তিতুমীর কলেজে প্রচুর শিক্ষার্থী থাকার কারণে সমস্যা মোকাবিলা করা একটু কঠিন হচ্ছে। তারপরও আমরা সচেষ্ট, কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।’ নতুন ভবনের ওয়াশরুম ব্যবহার বন্ধ আছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীতে স্বাস্থ্যকর শৌচাগার ব্যবহারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত লাখখানেক মানুষ। তাদের অনেকেই খোলা স্থানে কিংবা সড়কের পাশে মল মূত্র ত্যাগ করে। রাজধানীতে প্রতিদিন চলাচলকারী জনগণের ব্যবহারের উপযোগী গণ-শৌচাগারের সংখ্যাও বেশি নেই। যা আছে, এর অধিকাংশই খারাপ। তবে সব কিছু মাড়িয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে অন্তত শৌচাগারের ভালো পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন শিক্ষার্থীরা।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড