মো. রাকিবুল হাসান তামিম, ডিসি প্রতিনিধি
সারাদেশের পাশাপাশি রাজধানীর অন্যতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজেও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে।
আর এই উদযাপনে এসে অভিভূত হয়েছেন ভারতীয় এক অধ্যাপক। ওই অধ্যাপকের নাম ড. শেখ কামাল উদ্দিন। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নহাটা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দৈনিক অধিকারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি তাঁর অনুভূতির কথা জানান।
অধ্যাপক ড. শেখ কামাল বলেন, ‘ভারতবর্ষে আমরা বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একসঙ্গে পালন করা হয়। ঢাকায় আসার পরেই আমার ইচ্ছা ছিল যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাব। কিন্তু যাবার সময় দেখলাম ঢাকা কলেজে শহীদ দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। আমি এসে যা দেখলাম এককথায় অভিভূত, আনন্দিত।’
তিনি বলেন, ‘২২ ফেব্রুয়ারি ‘‘ইতিহাস সংসদ’’ ঢাকা একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে এই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে একটি পেপার প্রেজেন্ট করব বলে আমি ঢাকায় এসেছি। যেহেতু তার আগের দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তাই একদিন আগেই ঢাকায় পৌঁছেছি। এখানে আসলাম দুটি কাজ একসঙ্গে হবে। সেমিনারে অংশগ্রহণ করব আর যেটা এতদিন বইয়ের পাতায় পড়েছি সেই মাতৃভাষা দিবস উদযাপন স্বচক্ষে দেখব।’
অধ্যাপক বলেন, ‘বইয়ের পাতায় পড়েছি মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমি যা দেখলাম তা আমার ধারণার বাইরে। এক কথায় অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছে। আমিতো ভারতে ফিরে আমার বন্ধুদেরকে এমন উদযাপনের কথা জানানোর জন্য ছটফট করছি। যেটি আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে সেটি হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।’
কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে অধ্যাপক ড. শেখ কামাল (ছবি : দৈনিক অধিকার)
এর আগেও ভারতের এই অধ্যাপক দুই বার বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান। একবার পহেলা বৈশাখে যশোর শহরে আরেকবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকসংস্কৃতি বিষয়ে সেমিনারে অংশ নিতে। তখন তিনি কুষ্টিয়া, শিলাইদহ অঞ্চল ঘুরে দেখছেন। ঢাকাতে এবারই প্রথম।
বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘কলকাতার বিভিন্ন কলেজে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। আমি নিজেও ৬ বছর একটি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছি। তখন বেশ ভালোভাবে চেষ্টা করেছি দিবসটি পালন করার। আমাদের কলেজেও মাতৃভাষা দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু আমি ঢাকা কলেজে যা দেখলাম, একটি কলেজ চত্বরে যেভাবে মাতৃভাষা দিবসের উদযাপন দেখলাম কলকাতায় সেটি কখনও চোখে পড়েনি।’
বাংলা ভাষার প্রতি কলকাতার মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমছে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘বর্তমানে কলকাতায় বাংলার চাইতে ইংরেজিতে আগ্রহ বেশি। এখন বাঙালিরাও তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ইংরেজি শেখাতে বেশি পছন্দ করেন। আমার ছেলে বাংলা জানে না, বাবা-মা এখন এই কথা বেশ গর্বের সঙ্গে বলেন। আমরা জানি না পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষাকে প্রধান ভাষা হিসেবে কতদিন ধরে রাখতে পারব। তবে এটি খুবই দুঃখজনক ও হতাশার।’
আরও পড়ুন : তিতুমীর কলেজে অমর একুশে পালিত
ঢাকা কলেজ প্রশাসনের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। এখানে আমি বাঙালির প্রাণের ছোঁয়া দেখেছি।’
পরে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এসে পরিদর্শন বইতে তিনি লিখেন, ‘আজ ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভ প্রাক্কালে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির অফিসে তরুণ সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে আনন্দিত ও অভিভূত। ওদের সাফল্য কামনা করি।’
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড