• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আবরারের পর এবার ঢাবির ৪ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন

  ঢাবি প্রতিনিধি

২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:৩৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা (ছবি : সম্পাদিত)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার চার মাস না পার হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটল।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাতে এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের পর আহত শিক্ষার্থীদের হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

নির্যাতিত চার শিক্ষার্থী হলেন- মো. মুকিম চৌধুরী (ট্যুরিজম অ্যান্ড হস‌পিটা‌লি‌টি ম্যা‌নেজ‌মেন্ট বিভাগ, ২য় বর্ষ), সানোয়ার হোসেন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ৩য় বর্ষ), মিনহাজ উদ্দিন (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ২য় বর্ষ) ও আফসার উদ্দিন (আরবি বিভাগ, ২য় বর্ষ)।

নির্যাতনে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন- ছাত্রলীগের সহসভাপ‌তি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত প্রমুখ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়। এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা এবং সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তর অনুসারীরা তাকে শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মানসিক চাপ দিতে থাকে। সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করলে তাকে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে নেতারা।

এরপর মুকিমের ফোন ও ম্যাসেজ চেক করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানোয়ার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন এবং একই বর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে গেস্টরুমে এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসা করে ছাত্রলীগ নেতারা। শিবির সংশ্লিষ্টতার বিষয় অস্বীকার করলে তাদেরও ছাত্রলীগের নেতারা মারধর করে। একপর্যায়ে মারধর সহ্য না করতে পেরে ফ্লোরে লুটে পড়ে মুকিম ও সানোয়ার।

রাত ২টা পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এরপর প্রক্টরিয়াল টিম তাদের উদ্ধার করে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করে। পরে শাহবাগ থানা পুলিশ তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) সামনে এক ফার্মেসি দোকানদারকে মারধরের অপরাধে আমির হামজাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের নাম দিয়ে চাঁদাবাজিসহ জুনিয়রদের দিয়ে মল চত্বরে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা আমির হামজা বলেন, ‘আমরা তাদের মারধর করিনি। সরাসরি প্রক্টরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রত্যেকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তাদের নিকট থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে।’

তবে সাংবাদিকরা বইয়ের নাম ও ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাদের রাতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাতেই আবার থানায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তারা শাহবাগ থানার হেফাজতে আছেন।’

তবে ঘটনাকে অস্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তাদের হল প্রশাসন এবং প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় পুলিশে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে কিছু না পেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে হলে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’

এই বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, জয় একই হলের শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাসহ বহিষ্কার ২

এ দিকে, ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এসব বিষয়ে দলকানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুয়েটের আবরার হত্যার মতো ঘটনা ঘটলে প্রশাসনকে এর দায়ভার নিতে হবে।’ এ সময় প্রশাসনকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান ওই শিক্ষার্থী।

ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বিকাল ৩টায় সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে এবং ৪টায় শাহবাগে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড