জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রক্টর মোস্তফা কামালের পিএইচডি জালিয়াতির সংবাদকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পুড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ক্যাম্পাসে মিছিল করে রফিক ভবনের সামনে পত্রিকা পোড়ায় শিক্ষার্থীরা। এ দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রক্টরের পিএইচডি ডিগ্রির অনিয়মে প্রশাসনের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও জরুরি তদন্তের দাবি জানিয়েছে জবি প্রগতিশীল ঐক্যজোট ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শাখা।
বিবৃতিতে প্রগতিশীল ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বছরের ১৪ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকসহ অনলাইনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূতভাবে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের গুরুতর অভিযোগের সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের প্রেক্ষিতে কোনোরকম স্পষ্ট ব্যাখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেয়নি। উপরন্তু উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
প্রগতিশীল ছাত্র জোট নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রক্টরের মতো দায়িত্বশীল পদে অবস্থান করা একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অনাকাঙ্ক্ষিত ও উদ্বেগজনক যা সমাজে শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ সময় তারা প্রক্টরের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও স্পষ্ট প্রশাসনিক ব্যাখ্যা দাবি করেন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জবি শাখার সভাপতি মোনায়েম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক তানজিম সাকিব এক যৌথ বিবৃতিতে প্রক্টরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগকে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে প্রশাসন কর্তৃক অভিযোগকে আমলে নিয়ে অবিলম্বে সঠিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তদন্তকে নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারাও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জবি সাংবাদিক সমিতির এক প্রতিবাদ বার্তায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন কবির ও সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম বলেন, জবি সাংবাদিক সমিতি বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের যথাযথ প্রমাণ ও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যাচাই করা। সাংবাদিকদের মূর্খ হিসেবে আখ্যায়িত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে উপাচাযের্র এ বক্তব্যে সাংবাদিক সমাজ হতাশ এবং যা কোনোভাবেই আশা করে না।
জানা যায়, ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে সহকারি অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি ১টিতে ১ম বিভাগ/ গ্রেডিং পদ্ধতিতে ১টিতে কমপক্ষে ৩.০০ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ১টিতে ১ম শ্রেণী অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে ৩.৬০ থাকতে হবে। স্বীকৃত জার্নালে ১টি প্রকাশনা থাকতে হবে এবং স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রার্থীদের ন্যূনতম ৩ বছরের শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। স্বীকৃত উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এছাড়া ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের জবিতে পিএইচডি আবেদনের যোগ্যতা দেখা যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ৪ নম্বর ধারার ‘বি’ উপধারায় একজন থিসিস রেজিস্ট্রেশনের তারিখ হতে ৩ বছরের আগে পিএইচডি থিসিস জমা দিতে পারবে না। পিএইচডি নীতিমালার ২ এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগের জন্য পিএইচডি করতে হলে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। এছাড়া গ্রেডিং পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৩ দশমিক ২৫ সিজিপিএ থাকতে হবে। কিন্তু মোস্তফা কামালের সার্টিফিকেট থেকে দেখা যায় যে তার স্নাতক পর্যায়ে তার ফলাফল ২য় শ্রেণী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে তার অবস্থান ৯০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯তম এবং প্রাপ্ত নম্বর মোট নাম্বারের ৪৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন : ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পাচ্ছেন চুয়েটের ৪ শিক্ষার্থী
মোস্তফা কামালের স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রার্থীদের ন্যূনতম ৩ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, উনি ২০১০ সালের ৩১ মে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও ভাষা স্কুলে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। ২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি মোস্তফা কামালের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের আবেদন পত্রে দেখা যায়, সেখানে তিনি স্নাতক ও স্নাতক পর্যায়ের অভিজ্ঞতায় ১ বছর ৭ মাস ২২ দিন উল্লেখ করেছেন। সহকারি অধ্যাপক মোস্তফা কামালকে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ৩৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে মোস্তফা কামালের পিএইচডি থিসিস উত্থাপন হলে একাধিক ডিন ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তার বিরোধিতা করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩ বছরের মধ্যে থিসিস জমা দেওয়ার নিয়ম সংশোধন করে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ২ বছরের মধ্যে থিসিস জমা দেওয়ার নিয়ম করেন। পরে ওই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। যা ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর ৭১তম সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়।
ওডি/এমআরকে
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড