জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শহীদ মিনারকে অক্টোপাস আকৃতির উল্লেখ করে এর পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা অক্টোপাসের সঙ্গে শহীদ মিনারের তুলনাকে শহীদ মিনার অবমাননার শামিল হিসেবে দেখছেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করে একদল শিক্ষার্থী। মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে যে অক্টোপাস আকারের শহীদ মিনার আছে সেটি কি আসলে শহীদ মিনার না বসার স্থান, তাও অনেকে জানে না। এটিকে বসার স্থান ভেবে অনেকে জুতা নিয়ে ওপরে ওঠে, সন্ধ্যার পর অনেকে আড্ডাবাজি করে, এমনকি এর ভিতরে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপও চোখে পড়ে। যার ফলে ভাষা শহীদদের প্রতিনিয়ত অবমাননা করা হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে, ২১ ফেব্রুয়ারির আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুত্তাকি বলেন, ‘খুব বেশি প্রয়োজন না হলে শহীদ মিনার পরিবর্তনের প্রয়োজন নাই, কেননা এটা স্পর্শকাতর একটা বিষয়। এখানে ভিন্ন জনের বিভিন্ন মত চলে আসবে। শহীদ মিনারকে অক্টোপাসের সঙ্গে তুলনা করা অশোভনীয়। শহীদ মিনারের সঙ্গে শহীদদের বিষয় চলে আসে। শহীদদের সঙ্গে অক্টোপাস একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।’
ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মোনায়েম হোসেন বলেন, ‘শহীদ মিনার যখন করা হয় একটা বিষয়কে সামনে রেখে করা হয়। কালের পরিক্রমায় এটি পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু শহীদ মিনারকে কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করে সরিয়ে দেওয়া ঠিক না। শহীদ মিনারকে অক্টোপাসের সঙ্গে তুলনা করা অবশ্যই অবমাননা। শুধু শহীদ মিনারকেই নয়, আমাদের শহীদদের অবমাননা করা হয়েছে, কাজটা ঠিক হয়নি।’
জবিতে চলমান ৭ দফা আন্দোলনের সংগঠন তাওসিব মাহামুদ সোহান বলেন, ‘বর্তমান শহীদ মিনারের একটা ইতিহাস ঐতিহ্য আছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র শহীদ মিনার আছে। তারা দাবি করেছে জুতা নিয়ে উঠলে শহীদ মিনার অবমাননা হয়, কিন্তু তারা শহীদ মিনারকে অক্টোপাসের সঙ্গে তুলনা করে বড় অবমাননা করেছে।’
তবে আন্দোলনকারীদের নেতা মো. মশিউর রহমান তাদের বক্তব্যে শহীদ মিনার অবমাননার কোনো সুযোগ দেখছেন না।
তিনি বলেন, ‘এটা শহীদ মিনার না বসার জায়গা, না আড্ডা দেওয়ার জায়গা বোঝা যায় না। শহীদদের প্রতিনিয়ত অপমান করা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত মানুষ জুতা পায়ে উঠছে, আড্ডা দিচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নতুন শহীদ মিনার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বর্তমান শহীদ মিনারে শহীদদের অবমাননা করা হচ্ছে, তাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হলে মানুষের বুঝতে সুবিধা হবে।’
শহীদ মিনারকে অক্টোপাস আকার কেন বলা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা দেখতে তো অনেকটা অক্টোপাসের মতো এ কারণেই। অক্টোপাসের অনেকগুলো হাত-পা, অক্টোপাসের মতো এটার মিল আছে একটা।’
শহীদ মিনারকে অক্টোপাসের সঙ্গে তুলনা করাতে শহীদ মিনার অবমাননা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শহীদ মিনারটা যেভাবে বানানো হয়েছে ওটা তো অক্টোপাসের মতো দেখাচ্ছে। আমরা দৃশ্যমান অবস্থার কথা বলেছি। এখানে কোনো অবমাননা হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত জবির শহীদ মিনারের একটি প্রধানসহ মোট ৮টি বেদি রয়েছে। প্রতিটি বেদি বৃত্তাকারে সাজানো। প্রত্যেকে নিজ অবস্থানে পেছনের দিকের পাদদেশে কোমর ভেঙে হেলানো। প্রধান বেদিটি দাঁড়ানো অবস্থায় সামনের দিকে অর্ধনমিতভাবে রয়েছে। মূলত ভাষার জন্য চার শহীদের দেওয়া রক্তের প্রতি সম্মান জানাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার একইভাবে তৈরি করা হয়েছে। তবে জবির শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলনের দাবিতে ছাত্রদের সংঘবদ্ধ সমাবেশের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
এ ব্যাপারে জবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের শহীদ মিনারে কয়েকটি বেদি চারদিকে সাজানো রয়েছে। প্রত্যেকটি বেদি পেছনের দিকে হেলানো থাকলেও এর মাঝখানের বেদিটি দাঁড়ানো অবস্থায় রয়েছে। উপরের একটু অংশ সামনের দিকে নুয়ে পড়েছে। মনে হয় এ থেকে সভা-সমাবেশের কোনো চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।’
মানববন্ধন ও স্মারকলিপিতে অক্টোপাসের সঙ্গে তুলনার বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি কাল দেখতে হবে, শহীদ মিনার ও শহীদের মর্যাদা অবশ্যই রক্ষা করা উচিত।’
আরও পড়ুন : ঢাবির ৬৩ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘এটা কলেজ আমলের, পরিবর্তনের দাবি সবার। এটা আমারও পছন্দ না। আমরা এটা পরিবর্তনের চিন্তা করছি। এই ক্যাম্পাসে তো স্থায়ী কিছু আমরা করব না, ছোট একটা নান্দনিক শহীদ মিনার করা যায়। সে ক্ষেত্রে যে করেছিল তার একটা অনুমতির বিষয় আছে।’
স্মারকলিপিতে শহীদ মিনারকে অক্টোপাসের সঙ্গে তুলনা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড