• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কক্ষে আটকে শিক্ষার্থীকে অধ্যাপকের মারধর!

  রাকিব হাসান তামিম, ডিসি প্রতিনিধি

১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৫৮
ঢাকা কলেজ
সিসিটিভি ফুটেজের স্থিরচিত্র, ইনসেটে অভিযুক্ত শিক্ষক (ছবি : সম্পাদিত)

তুচ্ছ ঘটনায় ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে কক্ষে আটকে বেধড়ক মারধর করেছেন ঢাকা সিটি কলেজের এক সহযোগী অধ্যাপক। এমনই অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব সংঘটিত ঘটনার জেরে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সিটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরপর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পাল্টা প্রতিহত করার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষই সংঘর্ষে জড়ায় এবং প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়।

ঘটনার ব্যাপারে জানার পর ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ কলেজের নিবিড় পরিচর্যা কমিটির সদস্যদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন। অধ্যক্ষের নির্দেশের পর নিবিড় পরিচর্যা কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ, সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, প্রভাষক শামিম আহমেদ, প্রভাষক মাহমুদুল হাসান সবুজ সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থলে যাবার পর তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।

এ সময় ঢাকা কলেজের স্নাতক শ্রেণির শামীম পারভেজ সুমন এবং মোহাম্মদ আলী নামের দুই শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করলে উপস্থিত সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ওপরও চড়াও হয়। এ সময় সিটি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আহসান হাবিব রাজা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলীকে ধরে নিয়ে যান এবং উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ের পাশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আটকে রেখে মারধর এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মারধরের শিকার ঢাকা কলেজের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি ও আমার হলের বড় ভাই (শামীম পারভেজ সুমন) খাবার খেতে সায়েন্স ল্যাব গিয়েছিলাম। ওই সময় সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে দেখে ঘটনাস্থলে যাই এবং তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। তখন উপস্থিত সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে এবং আমার মোটরসাইকেলে লাথি মারে। পরে আমি ঐ শিক্ষার্থীকে বুঝিয়ে সিটি কলেজের শিক্ষকদের কাছে সোপর্দ করি। তখন সিটি কলেজের শিক্ষক আহসান হাবীব রাজা আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র জানা মাত্রই আমাকে টেনে হিঁচড়ে উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ের পাশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যায় এবং কক্ষের দরজা আটকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি এবং চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। এ সময় আমি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিলে তিনি আমার প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হন নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে আবারও পেটাতে থাকেন এবং বলেন, তুই কীসের ছাত্রলীগ করিস? তোর মতো ছাত্রলীগ আমি গুণি না।’

এ সময় ঐ শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা প্রদান করা হয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। এ সময় ঢাকা কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ডান হাতে তীব্র আঘাত পান। পরে আহত অবস্থায় ঢাকা কলেজের ঐ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে ও আমার সহকর্মী শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তারপরও আমরা ওই শিক্ষার্থীকে রুম থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা সিটি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আহসান হাবীব রাজা বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি তার (মোহাম্মদ আলী) জীবন বাঁচিয়েছি।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক বদর উদ্দিন আহমেদ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা কলেজের এক থেকে দেড়শ শিক্ষার্থী রড, বাঁশ নিয়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।’ তবে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ঘটনার বিষয়ে সিটি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে। তারপরও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা দুঃখজনক। অভিযুক্ত হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘যে কোনো প্রকার অনভিপ্রেত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আলোচনা চলছে। শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর ওপর এ ধরনের হামলা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা কখনো কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলেছি।’

ঘটনার পরপরই নিউমার্কেট মার্কেট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ইয়াসিন, ধানমন্ডি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আশফাক, পূর্ব ধানমন্ডি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাহেব আলীসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন।

নিউমার্কেট থানার ওসি এস.এম কাইয়ুম বলেন, ‘যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড