• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগ

বিতর্ক ও অভিযোগে কাজী-রুবেল কমিটির তিন বছর

  বাকৃবি প্রতিনিধি

১৭ নভেম্বর ২০১৯, ২০:০৭
বাকৃবি ছাত্রলীগ
ছবি : দৈনিক অধিকার

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর ১ বছরের জন্য বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মো. সবুজ কাজী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মিয়া মোহাম্মদ রুবেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এছাড়াও সহসভাপতি হিসেবে আনোয়ারুল হক ও এসএম আনিসুজ্জামান জনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নুর এ আলম তপন ও মামুন আল মনসুর এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ফয়সাল আহমেদ সোহান ও শেখ মাহমুদুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে এস এম রায়হান, সজল মোস্তাক ইভান, খন্দকার তায়িফ রিয়াদ ও আরিফ মাহমুদকে নিয়ে আংশিক কমিটির ঘোষণা করা হয়।

পরবর্তীতে এক বছর পর ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের ২১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে সহসভাপতি পদে ৩৮ জন, যুগ্ম সম্পাদক পদে ৯ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৯ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর বিভিন্ন দফায় হল কমিটির অনুমোদন দেয় বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগ।

২০১৮ সালের ২৬ জুলাই ছেলেদের ৯টির মধ্যে ৫টি হলে (শাহজালাল, ফজলুল হক, ঈশা খাঁ, শহীদ নাজমুল আহসান ও আশরাফুল হক) হলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৬ জুন পূর্ণাঙ্গ হল কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই হল কমিটিতে ঈশা খা হলে ৭৪ জন, শহীদ জামাল হোসেন হলে ৬২ জন , শাহজালাল হলে ৬৯ জন, নাজমুল আহসান হলে ৬২ জন, শহীদ শামছুল হক হলে ৭৮ জন, আশরাফুল হক হলে ৮২ জন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৭৩ জন, ফজলুল হক হলে ৮০ জন, সুলতানা রাজিয়া হলে ৬ জনসহ সব হল মিলিয়ে প্রায় ৭শ জনকে হল কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও কেন্দ্রীয় কমিটি মিলে বাকৃবিতে ছাত্রলীগের প্রায় ৯ শতাধিক পদ ধারী নেতা রয়েছেন। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ২ বছর আগে। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় বর্তমান কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও কোন্দল দেখা দিয়েছে। পদপ্রত্যার্শীরা দ্রুতই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বাতিল চেয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এই কমিটি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাদক মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করে। এপ্রিল মাসে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে ২১ দফা দাবি প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, রক্তদান কর্মসূচি, সরকারের সাফল্যর বিভিন্ন কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণসহ জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন করে।

এই কমিটির কিছু আলোচিত ঘটনার মধ্যে, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় ৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়। ১৭ মে এক ছাত্র ফ্রন্ট কর্মীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। ১৪ সেপ্টেম্বর কিছু দাবি পূরণ না হওয়ায় ছাত্র উপদেষ্টার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২৪ সেপ্টেম্বর কর্মসূচিতে না যাওয়ায় নাজমুল আহসান হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও ছাত্রদলের লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে ৫ এপ্রিল ৮ ছাত্রলীগ নেতা আহত হয়। ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ বাকৃবির কে. আর. মার্কেটে দুপুরের দিকে বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বাকৃবি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তায়েফুর রহমান রিয়াদ ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম তপন ও উপ-সম্পাদক ইশতিয়াক ঈষানসহ প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের গেস্টরুমে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রলীগ কর্মী প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। এতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা গেস্টরুমে যেতে অপারগতা জানান। নেতৃত্ব না মানায় দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্ষিপ্ত হন। ওই সময় হলের উভয়পক্ষের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরে সিনিয়র নেতারা বিষয়টি সমঝোতা করে দেন। কিন্তু ওই রাতে আবার দুই বর্ষের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় উত্তেজনা ও মারামারির ঘটনা ঘটে।

চলতি বছরের ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জামাল হোসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি দীপক হালদারকে সালাম না দেওয়ায় গভীর রাত পর্যন্ত মাকসুদুল হক ইমু নামের এক শিক্ষার্থীকে হলের কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ইমু বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিশ শাফি, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শাওন এবং পাঠাগার সম্পাদক মো. রাহাত হোসেন রাত ১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে হলের পূর্ব ব্লকের ৫ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। পরে তারা হল সভাপতিকে সালাম না দেয়ার কারণ জানতে চান এবং তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটান।

সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ও শহীদ শামসুল হক হলে ছাত্রলীগের বর্তমান পদ ধারী ছাত্র নেতাদের সঙ্গে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর আগে এ বছরের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কে. আর মার্কেটে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হয়। এছাড়াও বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য, মাদক সেবন ও ব্যবসা, র‌্যাগিং, গেস্ট রুম করানো, শো ডাউনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল বিভিন্ন ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘অতীতের যে কোনো কমিটির চেয়ে বর্তমান কমিটি সুশৃঙ্খলভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলোর সমাধান করে দিয়েছি।’

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ পেলে যে কোনো মুহূর্তে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিবো।’

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ময়মনসিংহ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি শাখা ও ইউনিটের মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়েছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। খুব শিগগির সম্মেলন করে নতুন কমিটির ঘোষণার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড