নয় দফা দাবিতে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের লং মার্চ

এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কর্তব্যরত ডাক্তার, রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ, হাউজ টিউটর, ভেটেরিনারি অনুষদের ডিনের পদত্যাগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মানোন্নয়ন, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নয় দফা দাবিতে লং মার্চ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে ওই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিভিন্ন অনুষদীয় ছাত্র সমিতির নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে লং মার্চ শুরু হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনুষদ প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ ও পশুপালন অনুষদের চলমান ক্লাস-পরীক্ষা এবং ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের চলমান ইন্টার্নশিপের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা লং মার্চ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে- দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে কর্তব্যরত ডাক্তার, রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ও হাউজ টিউটর এবং ভেটেরিনারি অনুষদের ডিনের পদত্যাগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কমপক্ষে ৫টি অ্যাম্বুলেন্স, আধুনিক ওষুধপত্র সরবরাহ করা, হেলথ কেয়ারে অভিযোগ বক্স স্থাপন এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং চালু, ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বৃক্ষসমূহ কর্তন ও পরিবেশ উপযোগী বৃক্ষরোপণ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কর্নার স্থাপন প্রভৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার নাগরিক হারানি জানাকি রামান শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। পরে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে তার সহপাঠীরা ও হলের কর্মচারীরা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টা ১৫ মিনিটে মারা যায় হারানি। এ সময় হলের প্রাধ্যক্ষ, অনুষদীয় ডিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও হলের কর্মচারীরা সেখানে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হেলথ কেয়ার সেন্টারের অব্যবস্থাপনা ও সময়মত অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি সে সময় অন্য রোগী নিয়ে বাইরে ছিলো। অন্যদিকে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার একজন থাকায় অন্য অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা যায় নি। যার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার থেকে দুজন ড্রাইভার দেওয়া হয়।

রবিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মানোন্নয়ন, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যাবৃদ্ধি, সার্বক্ষণিক ডাক্তারের উপস্থিতির দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ওই দাবিসহ মোট নয় দফা দাবিতে আবারও রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান আন্দোলনকারীদের সামনে উপস্থিত হয়ে দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে শিক্ষার্থীরা ডিনের পদত্যাগ বাস্তবায়নের দাবি জানান। ডিনের পদত্যাগ নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় বুধবার লং মার্চে ডিনের পদত্যাগের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের কোনো স্লোগান দিতে দেখা যায়নি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে আমি আন্তরিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু করতে হবে। সে লক্ষে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

ওডি/এমএ