গবি প্রতিনিধি
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নবীনবরণ, বিদায় অনুষ্ঠান বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে রং ছিটানো, কারো শরীরে লাগানোকে কেন্দ্র করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) প্রশাসনের জারিকৃত নির্দেশনাকে বিকৃত মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছেন গবি সাধারণ ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক রনি আহম্মেদ।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনে নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেন রনি আহম্মেদ।
রনি আহম্মেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত চিন্তার একটা জায়গা। শিক্ষার্থীদের যদি এভাবে আটকে রাখা হয়, তাহলে তারা মুক্ত চিন্তা করবে কীভাবে? আমাদের পাশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখতে পারি দেয়ালে তারা বিভিন্ন লেখালেখি, চিত্র ইত্যাদি আঁকাআঁকি করে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হচ্ছে। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়ালে দাগ দিতে পারছি না। এটা খুবই দুঃখজনক।’
একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটানো ও সাংস্কৃতিক চর্চার একটি অন্যতম ক্ষেত্র। জ্ঞান অর্জনের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনুষ্ঠান, উৎসবের পাশাপাশি এ দেশের ঐতিহ্য রক্ষার ধারক ও বাহক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এসব সংস্কৃতির বিপরীতে গিয়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনে কঠোরতা আরোপ করছে প্রশাসন।
নোটিশ জারির পরই তা প্রত্যাখ্যান করে অতিদ্রুত এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন গবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) মো. জুয়েল রানা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে তিনি একটি পোস্ট করেছেন। পোস্টে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের কিছু কিছু নিয়ম, আচার-আচরণ, চাল-চলন শিক্ষার্থীদের একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া উচিত না। আর প্রশাসন সবসময় বড় গলায় বলে, এই প্রতিষ্ঠান গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য। তাহলে সামান্য দেয়ালে রং লাগালেই (২৫-৫০) হাজার টাকা জরিমানার বিধান কি লঘু দোষে গুরুদণ্ড নয়? যদি আগামীকাল (১২ নভেম্বর) দুপুরের মধ্যে এই ভুয়া নোটিশ সংশোধন করা না হয় তাহলে আমরা কঠোর অবস্থানে যাব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো জুলুম মেনে নেওয়া হবে না।’
এ দিকে, দুপুর পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে র্যাগিং বন্ধে প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনে নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এসবের মধ্যে বিদায় অনুষ্ঠান, নবীনবরণ বা অন্য কোনো প্রোগ্রামে ক্যাম্পাসে রং ছিটানো, কারো শরীরে বা দেয়ালে রং দেওয়া, অশ্লীল নাচ, গান ও কৌতুক পরিবেশন ইত্যাদি কার্যক্রম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। একই সাথে ক্যাম্পাসে বাইরের কোনো কোনো শিল্পী এনে ব্যান্ড শো প্রদর্শন না করার জন্য বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তথাকথিত র্যাগিংয়ের নামে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন, শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি করা যাবে না। এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে। যদি কেউ এ নিষেধ অমান্য করে এসব কার্যকলাপে লিপ্ত হয় তাহলে অপরাধের তীব্রতা বিবেচনা করে তাকে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে নোটিশে জানানো হয়।
প্রশাসন থেকে এ সংক্রান্ত নোটিশ জারির পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সোমবার বিকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানান। ফেসবুকে করা এক জরিপে সিংহভাগ শিক্ষার্থীই প্রশাসনের নেওয়া এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের মত দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এ সিদ্ধান্তের নিন্দা এবং অবিলম্বে এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড