সিলেট প্রতিনিধি
সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অধিক অকৃতকার্য হওয়ায় সিলেটে অন্যবারের তুলনায় এবার পাশের হার অনেকটাই কম হয়েছে। যেখানে গত বছর আইসিটিতে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছিল। তবে এবার আইসিটিতে ভালো ফলাফল করলেও সবচেয়ে বেশি ফেল করেছে ইংরেজিতে। যে কারণে সার্বিক ফলাফলেও পড়েছে এর প্রভাব।
মানসম্মত শিক্ষকের অভাব, বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক ও সঠিক শৃঙ্খলার অভাবের কারণে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো যাচ্ছেনা বলে অভিমত বিশিষ্ট জনদের।
চলতি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় চায়ের নগরী খ্যাত এই সিলেটে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বাড়লেও বাড়েনি গুণগত মান। ফলে এবার দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট বোর্ড। পাসের হারে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে এই জেলা।
চলতি বছর সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাশের হার ৬৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। যা গত বছরও ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ ফলাফল অর্জন করে দিনাজপুর বোর্ডের সাথে যৌথভাবে ৬ষ্ঠ অবস্থান অর্জন করেছিল।
এ দিকে এবারও জিপিএ-৫ দিকে সারাদেশের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে সিলেট। যেখানে জিপিএ-৫ মাত্র পেয়েছে ১ হাজার ৯৪ জন। যদিও এবার দিনাজপুর বোর্ডেও সিলেটের সমান সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটো বাড়লেও শিক্ষার গুণগত মান বাড়েনি বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট জনেরা।
এ ব্যাপারে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, 'সিলেটে ভালো শিক্ষকের কারণে গুণগত মান বাড়ানো যাচ্ছে না। পাসের হারের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে গুণগত মান বাড়ানোর দিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। নিয়মিত কলেজগুলো পরিদর্শনসহ শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। তাহলে শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে।'
এ বছর সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২৮৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৭৬ হাজার ২৫১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৫১ হাজার ১২৪ জন। যার মধ্যে ২২ হাজার ৪৯০ জন ছেলে ও বাকি ২৮ হাজার ৬৩৪ জন মেয়ে। যেইখানে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৯৪ জন। যাদের মধ্যে ৬৪৪ জন ছেলে ও ৪৫০ জন মেয়ে। এবার শতভাগ পাস করেছে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। যদিও শতভাগ ফেল এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সিলেটে নেই। বুধবার বেলা ১টায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কবির আহমদ।
জেলা শিক্ষাবোর্ডের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, 'সার্বিক দিক দিয়ে সিলেটে ফলাফল ভালো হয়েছে। তবে এবার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে ফেল করেছে। ফলে ফলাফলে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে এবার আইসিটিতে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভালো করেছে। গতবার আইসিটিতে ফেল ছিল সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী।'
জেলাওয়ারী এগিয়ে সিলেট, পিছিয়ে মৌলভীবাজার সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে পাশের হার ও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। অপরদিকে জিপিএ-৫ এ পিছিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা এবং পাশের হারে পিছিয়ে মৌলভীবাজার জেলা। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়। ফলাফলে দেখা গেছে, সিলেট জেলায় পরীক্ষার্থী ছিল ৩০ হাজার ৯২৩ জন। এরমধ্যে পাস করেছে ২১ হাজার ৮৩০ জন। পাসকৃতদের মধ্যে ১০ হাজার ৬ জন ছেলে এবং ১১ হাজার ৮২৪ জন মেয়ে। পাসের হার ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ এর ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। এ জেলায় ৭৭২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে ৪৭৯ জন ছেলে এবং ২৯৩ জন মেয়ে।
সুনামগঞ্জ জেলায় এবছর পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ হাজার ৪৬৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৯ হাজার ৪৫৮ জন শিক্ষার্থী পাশ করেছে। এ জেলায় পাশের হার ৬৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পাসকৃতদের মধ্যে ৩ হাজার ৯৩০ ও ৫ হাজার ৫২৮ জন মেয়ে। জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ২৮ জন। এর মধ্যে ১০ জন ছেলে এবং মেয়ে ১৮ জন মেয়ে। এদিকে পাসের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৫ হাজার ৯১৫ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৯ হাজার ৭০১ জন শিক্ষার্থী। পাশের হার ৬০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। পাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ হাজার ১২১ জন ছেলে ও ৫ হাজার ৫৮০ জন মেয়ে। এই জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৭ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ১১০ জন ছেলে ও বাকি ৯৭ জন মেয়ে।
তাছাড়া হবিগঞ্জ জেলায় এবার পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ হাজার ৯৪৯ জন। যার মধ্যে পাস করেছে ১০ হাজার ১৩৫ জন। যেখানে পাশের হার ৬৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৩৩ জন ছেলে ও ৫ হাজার ৭০২ জন মেয়ে। এই জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৮৭ জন। যাদের মধ্যে ৪৫ জন ছেলে ও বাকি ৪২ জন মেয়ে।
এবার সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর দিক দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে।
বিভাগটিতে পাশের হার ৮৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৪৪ জন। যার মধ্যে ৫৭৭ জন ছেলে ও বাকি ৩৬৭ জন মেয়ে। চলতি বছর বিভাগটিতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৫৯৫ জন। যার মধ্যে পাস করেছে ১১ হাজার ১৮৫ জন। উত্তীর্ণ এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ হাজার ৭৯৯ জন ছেলে ও বাকি ৫ হাজার ৩৮৬ জন মেয়ে।
অপর দিকে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী। মোট ৫১ হাজার ৬৩২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩১ হাজার ১৫৯ জন। এখানে পাসের হার ৬০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ হাজার ৮৩৫ জন ছেলে ও ১৯ হাজার ৩২৪ জন মেয়ে। বিভাগটি থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৯১ জন। যার মধ্যে ৩১ জন ছেলে ও ৬০ জন মেয়ে।
তাছাড়া সিলেটে বিভাগ ওয়ারী সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী রয়েছে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে। চলতি বছর ১২ হাজার ২৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ হাজার ৭৮০ জন। যেখানে পাসের হার ৭৩ দশমিক ০২ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৪ হাজার ৮৫৬ জন ছেলে ও ৩ হাজার ৯২৪ জন মেয়ে। বিভাগটি থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯ জন। যার মধ্যে ৩৬ জন ছেলে ও বাকি ২৩ জন মেয়ে।
এবার জেলায় জিপিএ-৫ এ ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও পাসের হারে অনেকটাই এগিয়ে মেয়েরা। এবার মেয়েদের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও ছেলেদের পাসের হার ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। যেখানে ছেলেরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৪৪টি ও মেয়েরা পেয়েছে ৪৫০টি।
সিলেটের ৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস সিলেটে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার কমেছে। গত বছর সিলেট শিক্ষা বোর্ডে শতভাগ পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১০টি। আর এ বছর তা কমে ৭টিতে নেমেছে।
আরও পড়ুন :- মুন্সীগঞ্জে এইচএসসি ও সমমানে পাসের হার ৬৯.৪৪%, ৫৭টি জিপিএ-৫
এর আগে ২০১৭ সালেও সিলেট শিক্ষা বোর্ডে শতভাগ পাশ করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৮টি। তবে সবচেয়ে বেশি ১৩টি শতভাগ পাশ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ২০১৫ সালে। যদিও এরপর বছরেই তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৫টিতে।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড