• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কী ভাবছে তরুণ প্রজন্ম?

মাদকের ভয়াল থাবা ও এর প্রতিকার

  রাকিবুল হাসান তামিম

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:২৭
তরুণ প্রজন্ম
ছবি : সম্পাদিত

একটা সময় ছিল যখন মাদক বা মাদকদ্রব্য সহজলভ্য ছিল না, কিন্তু বর্তমান সময়ে এই চিত্রটা পুরোপুরি উল্টো। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। আর এই দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে যুবসমাজ।

দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ প্রজন্ম। এই তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভাবনাকে ধারণ করার শপথ শিখতে হবে আগামী দিনের দেশ গড়ার কাণ্ডারিদের। পাশাপাশি দেশটাকে সুন্দর করতে সার্থকভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মানসিকতা ধারণ করতে হবে অন্তরে। তবে কী সামান্য নেশা বা মাদকের ভয়াল থাবার বিপন্ন হয়ে যাবে তরুণ প্রজন্ম?

মাদকের ভয়াল থাবার কবলে তরুণ প্রজন্মের আসক্তির কারণ বা এই মহামারী পরিস্থিতি থেকে উত্তোলনের কি উপায়?

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যায়নরত তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে দৈনিক অধিকারের এমন প্রশ্নের উত্তরে ওঠে এসেছে তাদের মতামত আর পর্যালোচনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক অধিকারের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান তামিম

গোলাম কিবরিয়া, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, উত্তরা :

ধূমপান বা তামাক গ্রহণ এখন এই প্রজন্মের নিকট সহজলভ্য ও স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অনেকের কাছে ধূমপান আবার ফ্যাশনেবল ট্রেন্ডি বা স্মার্ট হবার মাধ্যম। অথচ এই ধূমপানই হলো মাদকে আসক্ত হবার সদর দরজা। ধূমপানের মাধ্যমেই তামাকের সঙ্গে পরিচিতি পায় আমাদের তরুণপ্রাণ। তারপর ধূমপান একসময় টেনে নিয়ে যায় আরো অন্যান্য মাদক দ্রব্যের কাছে। বিশেষ করে বর্তমানে সর্বগ্রাসী ইয়াবা তরুণ-তরুণীদের মাঝে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবার ভয়াল থাবা ক্রমেই সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। দেশের শহরাঞ্চল থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এতে করে মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

মাদকের নেশায় তলিয়ে যাচ্ছে ছাত্র, যুবক-যুবতী তথা তরুণ প্রজন্ম। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। বর্তমানে ইয়াবা, গাঁজার ও ফেনসিডিলের দিকে নজর মাদক সেবীদের। সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকে।

আর মাদকাসক্তির ফলে প্রতিনিয়ত সমাজে অসংখ্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ঐশীর নাম নিশ্চয়ই ভুলে যাননি? যে মাদকাসক্ত হয়ে নিজের মা-বাবাকেও ছাড়েনি। ঐশী খারাপ সঙ্গের সঙ্গে মিশে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল। যখন বাবা-মা বিষয়টি জানতে পারেন, তখনই কড়া শাসনে ঐশীকে শুধরানোর চেষ্টা করেল ওমনি ক্ষীপ্ত হয়ে ঐশী নিজ হাতে নৃশংসভাবে খুন করে জন্মদাতা মা-বাবাকে। নির্মম ওই খুনের ঘটনা এখনও সাধারণ মানুষের মনে দাগ কেটে আছে।

এমন হাজারো ঐশী হয়তো আমাদের সমাজের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে। ঐশীর মতো মাদকাসক্ত সন্তান খুন করছে মা-বাবাকে, বাবা খুন করছে সন্তানকে। মাদকাসক্ত স্বামীর হাতে স্ত্রী, ভাইয়ের হাতে ভাই, ছাত্রের হাতে শিক্ষকও খুন হচ্ছেন। মাদকের কারণে তছনছ হচ্ছে পরিবার, প্রতিদিনই ভাঙছে কোনো না কোনো সংসার। বাড়ছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-বিভেদ, অস্থিরতা। এমনকি মাদকের টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার মতো মর্মস্পর্শী ঘটনাও ঘটেছে। সব কিছু ছাপিয়ে সর্বনাশা মাদক ধ্বংস করছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। তাই সর্বগ্রাসী মাদক বন্ধে সরকারী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরো সোচ্চার এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

ওবায়দুর রহমান, ঢাকা কলেজে :

মাদক আমাদের সমাজে মহামারি আকারে ধারণ করেছে। যার ফলে আমাদের তরুণ সমাজের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। যার বড় একটা প্রভাব পড়বে আমাদের উন্নত দেশে পদার্পণ করতে। আগে একটা সময় ধূমপান বা তামাক গ্রহণ করাটাই বড় ধরনের গর্হিত অপরাধ ছিল। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে তরুণরা শুধু তামাক বা সিগারেটে নয়, বরং তারা ক্রমশ আক্রান্ত হচ্ছে মাদকের ভয়াল থাবায়। বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম ইয়াবার মতো নীলদংশনে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। ইয়াবার নীলনেশায় বুঁদ হবার পেছনে কারণ যাই থাক, এর ফল খুব মারাত্মক।

মাদকে আক্রান্ত একটি ছেলে বা মেয়ের জন্য পুরো পরিবারটি ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, সামাজিকভাবেও ওই পরিবারটি সবার কাছে নিন্দিত ও হেনস্থার শিকার হয়ে থাকে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মাদক গ্রহণের ফলে ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যার সর্বশেষ এবং ভয়াবহ পরিণাম হলো মৃত্যু। সর্বোপরি সামাজিকভাবে মাদক বিরোধী আন্দোলন বৃদ্ধি করে শুধু তরুণ প্রজন্মকে নয় বরং সবাইকে সচেতন করতে হবে।

প্রতিনিয়ত স্কুল, মাদরাসা, কলেজসহ পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত মাদক বিরোধী সমাবেশ, এলাকা ভিত্তিক কাউন্সিলিং, মাদক বিরোধি প্রচার-প্রচারণা, মাদক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্কুল-কলেজ, পাড়া মহল্লায় খেলাধুলার প্রচলন, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চর্চা ও সর্বোপরি তরুণ প্রজন্মের মঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করা ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক ব্যাধি মাদকের করাল গ্রাস থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব।

লাবিবা তাবাসসুম, মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট :

আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার জনশক্তি। এই জনশক্তির একটি বৃহৎ অংশ হিসেবে রয়েছে তরুণ প্রজন্মের সরব উপস্থিতি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে সকল সমস্যা বিদ্যমান তার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো মাদকের ভয়াল থাবা।

যার কড়াল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে আমাদের যুব সমাজ আজ অনেকটা পঙ্গু। প্রাথমিক অবস্থায় টিনএজাররা অনেকটা কৌতুহল বা সঙ্গীর প্ররোচণায় সিগারেট বা তামাকে আসক্ত হয়। যা পরবর্তী সময়ে ইয়াবা, গাজা এমনকি সীসা সেবন পর্যন্ত ও গড়ায়। শহরাঞ্চল থেকে জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রাম পর্যন্ত মাদকের ছড়াছড়ি হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। এসব মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল, কলেজের তরুণ ছাত্ররা।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্যানুযায়ী, দেশে মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক। আর মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশই এখন ইয়াবায় আসক্ত। তবে আশার কথা হলো, অতি সম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি মাদক নির্মূলে সরকার বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ মাদকের বিষয়ে কোনো আপোষ না করা। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যহত রাখা এবং সীমান্তবর্তী বা মাদকের অভয়ারণ্য বিভিন্ন শহরে মাদকদ্রব্য যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানো।

মিজানুর রহমান, ইউনাইটেড কলেজ অব এভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট :

মাদক ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ থাবায় একটি প্রজন্ম প্রায় ধ্বংসের মুখে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে আমাদের যুবসমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এমনকি উঠতি বয়সী স্কুলমুখী কোমলমতি শিশুরাও সঙ্গদোষে জড়িয়ে পড়ছে নেশার বেড়াজালে। অনেকে আবার অল্প বয়সে দামি মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বকে জানার নামে ঢুকে পড়ছে অন্য জগতে। রাজধানীর নামিদামি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাস্তায় বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররাও ঝুঁকছে ভয়াবহ এ মরণনেশায়।

সর্বোপরি মাদক ব্যবসায়ীরা কোনো একক ব্যক্তি নয়, পুরো জাতিকে হত্যা করছে। অস্থিতিশীল করে তুলেছে পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে। যে কারণে দেখা দিয়েছে সামজিক অবক্ষয়। মাদক হলো ‘জাতির অভিশাপ’। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। জাতি অন্তঃসারশূন্যতা হয়ে পড়বে।

মাদক প্রতিরোধে সমাজ ও পরিবারকে সচেতন হতে। পরিবারের যথাযথ খোঁজখবর না নেয়ার কারণে অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এটা অনেক সময় এমন হয় যে পরিবারের সদস্যরা জানেনও না তাদের আদরের সন্তান মাদকের সঙ্গে জড়িত। মাদকাসক্তিতে ছেলেমেয়েরা এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে যে, মাদকের জন্য পরিবারের লোকজনকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। তাই মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে পরিবার ও দেশকে রক্ষা করতে হলে আগে দরকার পরিবারের সচেতনতা।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড