• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডাকসু : একটি ইতিহাস, একটি চেতনা

  মো. শাহ্ নেওয়াজ

২০ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:৪৫
ডাকসু
ডাকসু ভবন (ছবি : সংগৃহীত)

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। প্রতিষ্ঠার পর হতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য অবদান রেখেছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ঢাবি’র নামটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি ও তাদের অধিকার আদায় ও কতিপয় মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ডাকসু গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাসু)। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে নাম সংশোধন করে রাখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। অসংখ্য কৃতিত্বপূর্ণ কাজের মাধ্যমে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ডাকসু। ডাকসুই হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র।

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি ডাকসু অন্যায় অবিচার ও সকল অপরাজনীতির বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ায়। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ‘৬২ এর শিক্ষানীতি, ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এমনকি ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ডাকসু তার সাহসিকতার জানান দেয়। বহুকাল ধরে ডাকসুই নতুন ও জাতীয় নেতৃত্ব তৈরিতে মূল ভূমিকা রেখেছে।

ডাকসু নেতৃবৃন্দের সাহসী ও বলিষ্ঠ উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় নেতৃত্ব উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এক সময় সচল থাকার কারণে দেশে অসংখ্য ত্যাগী ও যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা তৈরি হয়। বর্তমান রাজনীতির মাঠে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তাদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আব্দুর রব, রাশেদ খান মেনন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মতিয়া চৌধুরীসহ অনেকেই ডাকসু নির্বাচনের ফলে বের হয়ে এসেছেন।

দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু অচল থাকায় নতুন প্রজন্মের ঢাবি শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জানে না ডাকসু কী ছিল! কী ছিল তার অতীত ঐতিহ্য? ডাকসুর পুরনো গৌরব নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই ভুলতে বসেছে।

১৯২৪-২৫ সালে ডাকসুর প্রথম ভিপি ও জিএস হিসেবে মনোনীত হন মমতাজ উদ্দীন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। প্রতিষ্ঠার পর মোট ৩৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর বিগত ৪৮ বছরে মাত্র ৭ বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। পরবর্তীতে অনেক বার ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েও তার আলোর মুখ দেখেনি।

সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা দিয়ে বর্তমান মাননীয় ভিসি স্যার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এক সাহসী ও যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি সত্যিই কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই ডাকসু নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন রূপে দেখা যাবে। সেই সঙ্গে বর্তমান প্রশাসনও ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিবে।

বহুদিন ধরে ডাকসু বন্ধ থাকায় জাতীয় জীবনে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীই রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং এদের বেশিরভাগই সহজাত নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন। যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্র বান্ধব নেতার অনুপস্থিতির ফলে রাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের এক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন প্রমাণ করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে যোগ্য ছাত্র নেতৃত্বের প্রয়োজন। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সুযোগ সন্ধানীরা এ জনপ্রিয় আন্দোলনগুলোকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করতে পারতো।

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় আগামীর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবিলম্বে ডাকসুসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান সমূহের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালু করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির পথ সুগম করা হোক।

ডাকসুই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই যে বাংলাদেশ এটা আবারো প্রমাণিত হোক ডাকসু নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। ঢাবি ফিরে আসুক স্ব মহিমায়।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড