সাদিকুর রহমান
'শৈশবে চিড়িয়াখানায় গিয়ে উটপাখি দেখতাম। এখন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে উটপাখি দেখছি। এদের নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, জেনে ভালো লাগছে। বলছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হারুণ।
তিনি বলেন, 'বইয়ে পড়েছি, পাখি, কিন্তু পাখি না এ হচ্ছে উটপাখি'। উটপাখি উড়তে পারে না তবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে'। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স (ডিভিএম) অনুষদের একটি বিভাগ জেনেটিক্স অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং। এই বিভাগের তত্ত্বাবধানেই উটপাখির গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিভিএম ভবনের পশ্চিম পাশে গড়ে তোলা হয়েছে উটপাখির এই খামার। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী উটপাখি দেখতে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের ও শ্রেণি পেশার মানুষ উটপাখি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন খামারে। উটপাখি দেখতে এসে দর্শনার্থীরা তাদের খাবার খাওয়ান ও ছবি তোলেন।
ইংরেজি বিভাগের ছাত্র রউফ বলেন, ‘এখন প্রতিদিন সামনে থেকে দেখে ওদের জীবনযাপন লক্ষ্য করছি। এখানে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে সারাদেশে উটপাখির খামার হবে, ভাবতেই ভালো লাগছে।’
আমদানি করা উটপাখির বাচ্চা (ছবি : দৈনিক অধিকার)
ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স (ডিভিএম) অনুষদের ছাত্র সুমন মিয়া বলেন, 'একটি উটপাখি বছরে ৪০-১০০ টি ডিম দেয়। এরা সাধারণত আড়াই-তিন বছর বয়সে প্রজনন ক্ষম হয়। গ্রোথ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া গরু-ছাগলের চেয়ে অনেক বেশি। এরা প্রায় সব ধরণের গো-খাদ্য (নেপিয়ার, যে কোনো ঘাস, লতা-পাতা, পাথর কণা, পোলট্রি ফিড) ইত্যাদি খায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গবেষণার জন্য উটপাখির বাচ্চা নিয়ে আসা হয়। প্রথমবারের উটপাখিগুলোর বয়স ২৭ মাস। পরে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আবারও ১৫ টি উটপাখির বাচ্চা নিয়ে আসা হয়।
ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স (ডিভিএম) অনুষদের ছাত্র রুম্মম হাসান বলেন, 'উটপাখির চামড়া, পালক, চর্বি, ডিমের খোসা, চোখ ইত্যাদি অনেক মূল্যবান এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এদের মাংসের ব্যাপক চাহিদা আছে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি উটপাখির ওজন ৬০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য প্রাণীর মাংসের তুলনায় এদের মাংসে চর্বির পরিমাণ ৩ শতাংশের কম এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ বেশি। ফলে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি উটপাখির মাংস গ্রহণে আগ্রহী। এছাড়াও এদের চর্বি কসমেটিকস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। উটপাখি ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ডিম দেয় যা লাইভস্টকের (পশুসম্পদ) মাঝে সর্বোচ্চ, অন্য কোন প্রাণী এত দীর্ঘ সময় ডিম বা বাচ্চা দেয় না'।
বিভাগের পিএইচডি ছাত্র আহসান হাবীব মিজান বলেন, 'প্রথমবার নিয়ে আসা উটপাখিগুলোর বয়স ২৭ মাস। এগুলোর ওজন প্রায় ১২০ কেজি, মার্চ-এপ্রিলে ডিম দিবে'।
প্রধান গবেষক ও জেনেটিক্স অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল গাফফার মিয়া জানান, 'আমাদের দেশের আবহাওয়া উটপাখির জন্য বেশ উপযোগী। বাংলাদেশে এদের খামার তৈরি করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে'।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড