• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিক্ষা, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাঙ্গন

  সাব্বির আহমেদ

১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:২১
সাব্বির
সাব্বির আহমেদ (ছবি : সম্পাদিত)

সূর্যের আলো পুরো পৃথিবীকে যেভাবে আলোকিত করে ঠিক তেমনি শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান আমাদের মন ও জীবনকে আলোকিত করে। আর সেই আলোর দুয়ার প্রসারিত করে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখে গবেষণা।

শিক্ষাঙ্গন হলো যেখানে শিক্ষা দেয়া নেয়ার খেলা চলে। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনের বর্তমান অবস্থা শোচনীয়। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষকদের যে জ্ঞানগত মান ও বৈদগ্ধ দেখা যেতো এখন তা বৃদ্ধির বদলে নিম্নগামী। শিক্ষক সুলভ বিনয়, ছাত্রদের প্রতি মমত্ববোধ তাদের মধ্যে অনুপস্থিত। শিক্ষক পদবি বর্তমানে তাদের ব্যক্তিগত অলঙ্কারের পর্যায়ে পড়ে, এর বেশি কিছু নয়।

শিক্ষার্থীর মানবতাবোধকে জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদানকে সার্থকই করে তোলেন না, পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেন। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদের দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন একজন শিক্ষক। আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষার এই সম্পর্ক এখন প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কে যে চরম অবনতির সৃষ্টি হয়েছে তার অন্যতম কারণ সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক কোথায় গড়াবে এনিয়ে অনেকেই সন্দিহান!

এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মানসম্পন্ন শিক্ষার শর্ত পূরণ আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং অর্থায়ন। সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে (২০১৮) বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ার সবচেয়ে নিচে। অর্থাৎ আমার দেশটি হলো উদ্ভাবনে সবচেয়ে পিছিয়ে। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এমনকি নেপালও আমাদের চেয়ে এগিয়ে। এই খবরটা যে কতটা উদ্বেগের, সেটা সম্ভবত আমাদের সরকার কখনোই উপলব্ধি করে না। আর এ সকল ব্যাপারে আমাদের জনগণের উদ্বেগ হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো, স্বল্পস্থায়ী।

এর সাথে যুক্ত হয়েছে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের প্রতিযোগিতা। অপর দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে। বহিরাগত ও বখাটেদের উৎপাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যায় স্কুলগামী ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশের পরিবেশকে অনিরাপদ মনে করে। (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক) এছাড়াও রয়েছে অবকাঠামোগত নানাবিধ সমস্যা।

দেশে বর্তমানে ৩৮ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৯৮ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭ টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে দিচ্ছে চরম ব্যর্থতার পরিচয়। নোংরা রাজনীতির শিকার, দলীয় সন্ত্রাস, ছাত্র-রাজনীতিতে দলীয় ক্যাডারদের প্রাধান্য, দলীয় ছত্র-ছায়ায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান, শিক্ষকদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ফাঁকি, সেশন জট সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার হতে পড়ছে ছিটকে।

ইউজিসি’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে কোন অর্থই ব্যয় করেনি। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৭। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য অর্থ ব্যয় করেনি ১০টি। ২০১৪ সালে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ ব্যয় করেনি। ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরণের গবেষণা প্রকাশিত হয়নি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১৩টিতে কোনো প্রকাশনা নেই!

২০১৪ সালে বেসরকারি ৩৯টি আর ১৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রকাশনা প্রকাশিত হয়নি। ২০১৩ সালে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দ ছিল না, ৪২টির কোনো গবেষণা ছিল না। আর ৩৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১০টির গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল শূন্য। ২০১২ সালে ৬০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৩টিতে কোনো গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হয়নি। ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার খাতে কোনো ধরনের টাকা ব্যয় করেনি। ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনও গবেষণা বৃত্তি দেয়নি।

ইউজিসি’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সার্বিকভাবে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে বেসরকারি ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলে। এর মধ্যে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে কোনো অর্থ ব্যয় করেনি। যা প্রায় ৩৩ ভাগ। অন্যদিকে ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের প্রকাশনা, প্রবন্ধ ও সাময়িকী প্রকাশিত হয়নি। বাকিরা নামে মাত্র গবেষণা খাতে বরাদ্দ রেখে দায় সেরেছে।

২০১৫ সালে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩টিতে কোনো গবেষণা প্রকাশিত হয়নি। গবেষণা খাতে কোনো ধরনের ব্যয়ই করেনি ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৪ সালে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গবেষণা বরাদ্দ ছিল না। যা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ শতাংশের বেশি। (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব )

শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থাও নেই। যেগুলো আছে সেগুলোর খাবার মান খুবই নিন্ম। যার ফলে ছাত্রদের মেধা বিকাশে সমস্যার তৈরি হচ্ছে। পরিবহন সমস্যা, সেশন জট, চাঁদাবাজি. দলীয় টেন্ডার নিয়ে মারামারি তো আছেই। মোট কথা শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ রূপে আজ বিঘ্নিত। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও সেমিনার গ্রন্থাগারগুলোতে নেই প্রয়োজনীয় গবেষণার বই।

বিপর্যস্ত শিক্ষাঙ্গন রুখে দাঁড়াবার এখনই সময়। কিন্তু আমরা রুখে দাঁড়ানোর বিপরীতে শতশত ঘৃণিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছি বারংবার। কতশত পদক্ষেপ গৃহীত হলেও এই সমস্যার সমাধান যেন অমাবস্যার চাঁদ। শিক্ষা ব্যবস্থার এই দুরবস্থা রোধে সচেতন নাগরিক সমাজ ও সরকার আন্তরিক না হলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পতন অনিবার্য। দেশ-জাতি নিমজ্জিত হবে অজ্ঞতার অন্ধকারে। তাই সময় থাকতে এক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণে এখনই আমাদেরকে সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড