আল মামুন জীবন,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বালিয়াডাঙ্গী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমকে ১৫ বছর যাবৎ সাময়িকভাবে বরখাস্ত রাখার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে একমাত্র জমি দাতা সদস্য সলিমউদ্দীন ও সহকারী শিক্ষিকা মোছা. মোখলেসা বেগমকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি থেকে বঞ্চিত রাখার।
সেই প্রধান শিক্ষক স্ব-পদে পুনরায় যোগদানের জন্য একাধিকবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায় পাওয়ার পরেও রায়টি কেন বাস্তবায়ন হয়নি, তার কারণ জানা নেই কারো। চাকরি পুনরায় ফিরে পেতে শেষ ভরসা এখন স্থানীয় সাংসদ।
তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আদালতে রায়ে ১৫ দিন কারাশ্রম ভোগ করে সুবোধ নামে অন্য সহকারি শিক্ষকের কাধে দায়িত্ব অর্পণ করে নিজে সহকারি শিক্ষকের পদে বহাল আছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। এমনকি সরকারি বিধি অনুযায়ি বরখাস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অর্ধ খোরাকীর টাকা প্রদানের নিয়ম থাকলেও তা বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ উঠেছে পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে।
বালিয়াডাঙ্গী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, নিজের ব্যক্তিগত প্রচেষ্ঠায় ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। পরে গেল ১ জুলাই ২০০৩ সালে নির্বাহী কমিটির রেজুলেশনের সিদ্ধান্তে স্ব-বেতনে বিএড প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করে সফলতার সাথে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিএড পাশ করে বিদ্যালয়ের তৎকালিন সভাপতি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে যোগদান পত্র দাখিল করে নিজ কর্মে যোগদান করি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৯ জুন ২০০৪ তারিখে স্মারক নং. ৩১৫(৫) তাৎক্ষনিক তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সলিমুদ্দিনকে দায়িত্বভার হস্তাতরের জন্য অফিস আদেশ প্রদান করেন। পরে ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সলিমুদ্দীনকে দায়িত্বভার হস্তান্তরের জন্য নির্দেশ প্রদান করা সত্ত্বেও অদৃশ্য শক্তির জোড়ে আজো সেই আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। বরং মিথ্যা তথ্য ও ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে ১৫ জুলাই ০৪ তারিখে তৎকালিন সভাপতি এম, এ, গফুর স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া ভিত্তিহীন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে সাময়িক বরখাস্তের পত্র প্রদান করলে আমি সন্তোষ জনক জবাব গেল ২০ জুলাই ০৪ তারিখে দাখিল করি।
তিনি বলেন, চাকরির বিধি মতে সময়িক বরখাস্তকালীন সময় অর্ধ খোরাকী ভাতা প্রদানের বাধ্যতামুলক বিধিমালা থাকলেও কোনো প্রকার আইন না মেনে শুরু থেকে অদ্যবধি অর্ধ খোরাকী ভাতা প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি আমার বড় ভাই আরেক সলিমউদ্দীনকে বিদ্যালয়ের একমাত্র জমি দাতা সদস্য থাকা সত্ত্বেও তাকে কমিটিতে দাতা সদস্য পদ থেকে ও আমার স্ত্রী মোছা. মোখলেসা বেগমকে সহকারী শিক্ষকের চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ অতাবস্থায় দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ মামলার খরচ ও সংসারে ছেলে মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, অ্যাডহক কমিটির শুধু একটি নিয়মিত কমিটি গঠনের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা থাকলেও বরখাস্তের চিঠি ইস্যু করেছিলেন সেই সময়ের অ্যাডহক কমিটি। সম্পুর্ণ নিয়ম নীতি বহির্ভূতভাবে দীর্ঘ অপেক্ষায় কোনো সদুত্তোর না পাওয়া নিরুপায় হয়ে সাময়িক বরখাস্তের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী বরাবরে ৫ জনকে আসামি করে মামলা দাখিল করি। বিজ্ঞ আদালত উভয়পক্ষের শুনানী শেষে ১৩ জুলাই ৫ তারিখে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করলে বিবাদীরা এ আদেশ অমান্য করলে ২১ আগস্ট ৫ তারিখে বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার আদেশ ও ৩ অক্টোবর ৫ তারিখে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। বিবাদীরা বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত তাদের খারিজ আদেশ প্রদান করে বিজ্ঞ বিচারক আদালতের রায়/আদেশ বহাল রাখেন। আবার মহামান্য হাইকোট বিভাগে ৪২৬৪/০৫ আপিল দাখিল করলে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে খারিজ আদেশ প্রদান করে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১২৯/০৭ আপিল দাখিলে খারিজ আদেশ প্রদান করে অতঃপর রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন সেখানেও গত ২১ জুন ০১৪ তারিখে খারিজ আদেশ প্রদান করে বিজ্ঞ বিচারিক আদালতের রায় আদেশ বহাল রাখেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, বিজ্ঞ বিচারিক আদালত মহামান্য আপিল বিভাগের রায় আদেশ বাস্তবায়ন কল্পে ন্যায় বিচারের স্বার্থে গত ৩ অক্টোবর ৫ তারিখের আদেশটি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সলিমুদ্দীনকে বাস্তবায়ন জন্য পুনরায় ৩ জুলাই ০১৪ ও ২৩ জুলাই ০১৪ তারিখে সিভিল পরোয়ানা ও অন্যান্য বিবাদীদের প্রতি স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার হস্তান্তরের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সলিমুদ্দীনকে গ্রেফতারের প্রচেষ্ঠায় ব্যর্থ হয়ে পুলিশ ফোর্স ছাড়া গ্রেফতার সম্ভব নয় বলে রিপোর্ট প্রদান করেন। বিজ্ঞ বিচারিক আদালত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সলিমুদ্দীনকে ৫ মার্চ ১৫ তারিখে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপারের মাধ্যম অফিসার ইনচার্জ বালিয়াডাঙ্গী থানা বরাবরে গ্রেফতারের আদেশ প্রদান করেন। দীর্ঘদিন পর ২১ আগস্ট ১৫ তারিখে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন যে, ৫ নং বিবাদী সলিমুদ্দীনের নামে থানায় সার্চ বহিতে গ্রেফতারী পরোয়ানা পাওয়া যায়নি।
ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সলিমুদ্দীন উক্ত গ্রেফতারী পরোয়ানার বিপরীতে মিথ্যা তথ্য দিয়া ১১/১৫ রিভিশন বিজ্ঞ জেলা জজ ঠাকুরগাঁও বরাবরে দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালতের উভয় পক্ষের শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারিক আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানার আদেশ বহাল রেখে রিভিশন মামলার খারিজ আদেশ প্রদান করেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সলিমুদ্দীন উক্ত খারিজ আদেশের বিপরীতে হাইকোট বিভাগে ১২৭৭/১৫ রিভিশন দাখিল করলে তাও ৯ ডিসেম্বর ১৫ তারিখে খারিজ আদেশে বিজ্ঞ বিচারিক আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা বহাল রাখেন। মামলাটি এখনও বিচারিক আদালতে চলমান আছে। এমতাবস্থায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সলিমুদ্দীন সহ অন্যান্য বিবাদীরা বিজ্ঞ বিচারিক আদালতসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় আদেশ অমান্য করে আসছেন।
আব্দুর রহিম আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দরিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু এখনও দায়িত্ব বুঝে পায়নি। এখন যদি সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দরিরুল ইসলাম ও প্রধান মন্ত্রী আমার দিকে সুদৃষ্টি দেন তাহলে আমি আমার ন্যায অধিকার ফিরে পাব।
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালিন ও বর্তমান সভাপতি এম, এ, গফুর দেশের বাহিরে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দবিরুল ইসলাম বলেন, আব্দুর রহিম খুব ভালো ছেলে। নিজ প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ার পরেও তাকে অন্যায় ভাবে বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। আমি বিষয়টি শুনার পরে তাকে সেই বিদ্যালয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চেষ্টা করব সে যেন পুনরায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ফিরে পায়।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, অনেক আগের ঘটনা সে বিষয়ে অবগত নয়। সঠিক কাজপত্র পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, বালিয়াডাঙ্গী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেন দীর্ঘদিন যাবত বরখাস্ত সে বিষয়ে সঠিক বলতে পারছি না তবে ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড