• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিচারহীনতার নেপথ্যে শেকৃবি প্রশাসন : চলে তদন্ত, হয় না বিচার

  আকাশ বাসফোর

১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৩২
শেকৃবি
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

প্রতিষ্ঠাকালীন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ম-কানুন ঠিকঠাক থাকলেও বর্তমান চিত্রটা ভিন্ন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনার শুধুমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও আসে না কোনো রিপোর্ট। তদন্ত কমিটিতেই শেষ হয়ে যায় বিচার কার্যক্রম।

সময়ের স্রােতে একসময় তা চাপা পড়ে যায়। নতুন কোনো ঘটনা এসে হাজির হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বেড়েও চলেছে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ঘটনাক্রমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ওপর আস্থা হারাচ্ছে।

দৈনিক অধিকারের এক বিশেষ অনুসন্ধানে জানা যায়, গেল বছরের (২০১৮) জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় এক নবীন শিক্ষার্থীকে নিজ দলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই এলাকাভিত্তিক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের ৯ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের ক্যান্টিন খোলা ও বন্ধ রাখাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলগীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ উভয় গ্রুপের ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। তখন ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল। ভাঙচুর হয় আবাসিক হলের বেশ কয়েকটি কক্ষ।

এছাড়াও কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে লাঞ্জিত হয় তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিক (বাংলানিউজ ২৪ প্রতিনিধি)। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। গেল ২ ডিসেম্বর রাতে ক্যাম্পাসে ইয়াবা বিক্রির সময় তারিফ (২৩) নামের এক যুবকে হাতেনাতে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা বিভাগ।

আটক হওয়া ওই যুবকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ক্যাম্পাসের মাদকচক্রের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত চার কর্মচারীর অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু ওই চার কর্মচারী বিরুদ্ধে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। গত মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ডাকাতির সময় বিশ্ববিদ্যালয়েরই জাহিদ (২৪) নামের এক শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার সম্পৃক্তা পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, কিন্তু ঐ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

এ দিকে, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রমাণ পাওয়া গেলেও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা এখনও প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে ডিভাইসসহ আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো বিচার হয়নি।

এছাড়া, চলতি বছরের শুরুতেই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই এলাকার (কুমিল্লা ও ঢাকা) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন উভয় পক্ষের ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। প্রতিটি ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে, কিন্তু উপরোক্ত কোনো ঘটনার বিচারের ফল আলোর মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, বিচারহীনতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে দিন দিন একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেই চলছে। এখানে নেই কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে ক্যাম্পাসে অপরাধের প্রবণতা। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করছেন এসব সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, অপরাধ দমনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর। বিভিন্ন কারণে ব্যস্ত থাকার জন্য তদন্ত কমিটি এসব ঘটনার রির্পোট দিতে বিলম্ব করছে আবার এদের মধ্যে কিছু ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। তদন্তের রিপোর্ট মোতাবেক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এক্ষেত্রে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

লেখক : শিক্ষার্থী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড