আরিফুল ইসলাম রিফাত
ছোটবেলায় দরিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে চোখমুখে পথ না দেখে পড়ালেখার মায়া ছেড়ে পরিবারের অন্য দশ জনের মতো মহিউদ্দীনকেও বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল জীবিকার তাগিদে। এতে করে বাড়িতে স্বচ্ছলতার দেখা মিললেও অন্তরে ফুটে রয়েছে ছোটবেলায় পড়ালেখা করতে না পারার দুঃসহ স্মৃতি।
মহিউদ্দীনের বাড়ি থেকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল যেটি কমপক্ষে দুই কিলোমিটারের কাছাকাছি। তখন থেকে ভাবতে থাকেন বড় হয়ে নিজের জন্য না হলেও এলাকাবাসীর জন্য আশপাশে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন তিনি। যাতে কোনো শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাহত না ঘটে এবং দুরদরান্তে পড়তে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা যেন আনন্দের চেয়ে বিষাদের না হয়।
কথাগুলো বলছিলাম চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা মিরিখিল নতুন পাড়ার মৃত সোলতান আহমদের পুত্র মোহাম্মদ মহীউদ্দীনের। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কেনো শিক্ষিত ব্যক্তি নয়। তারপরও তার অন্তর কাঁদে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য।
তারই ধারাবাহিকতায় তার বাড়ির পাশে পারিবারিক ৩৩ শতক জমির ওপর একটি বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্দোগ গ্রহণ করলে এমন মহৎ কর্মকে সাধুবাদ জানিয়ে পরিবারের ভাই বোনরা খুশি হয়ে জায়গাটি স্কুলের নামে করে দেন। এরপরই তার মনে শঙ্কা দেখা দেয় বিদ্যালয়টি কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় মিটিং করেন এবং শরণাপন্ন হন লোহাগাড়ার স্কুল পাগলা খ্যাত আধুনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল কবিরের।
এরপর থেকেই তিনি নিজের মতো করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসীর অন্যদশ জনের সঙ্গে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণে শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত প্রাণপণ লড়েছেন নুরুল কবির, জমির উদ্দীন বাবর, শহীদুল আলম কোম্পানি, আলমগীর, মুজিবসহ অনেকেই সকাল থেকেই সন্ধ্যা পর্যন্ত কলুর বলদের মতো কেটেছেন বিদ্যালয়টির জন্য।
এছাড়াও বিদ্যালয়টি নির্মাণে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আসলাম, অ্যাসিল্যান্ড পদ্মাসন সিংহ, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।
বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে মিরিখিল সোলতান আহমদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় গেল বছরের আগস্টে এবং শেষ হয় ডিসেম্বর। এটি নির্মাণে সম্পূর্ণ কংক্রিট দিয়ে সহযোগিতা করেছেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আসলাম, সম্পূর্ণ ইট চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব আনোয়ার কামাল, সম্পূর্ণ টিন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু কোম্পানি, সম্পূর্ণ দরজা জানালা রিয়াজ উদ্দীন বাজার বণিক সমিতির উপদেষ্টা জসিম উদ্দীন কবির দিয়ে সহায়তা করেছেন।
এছাড়াও এলাকাবাসী বাঁশ গাছ পেরেকসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সার্বিক সহায়তার ফসল সোলতান আহমদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি গেল ৫ জানুয়ারি ১৮০ জন শিক্ষার্থীদের বই বিতরণের মধ্য দিয়ে অনানুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে।
জানা যায়, কিছুদিন আগে কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় প্রধানমন্ত্রির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের কাছে এ সময় তিনি বিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও পর্যায়ক্রমে সরকারিকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা শুনেই আমরা সকলেই আনন্দিত। কারণ আমাদের ছেলে মেয়েদের পাহাড়ি মেটো পথ বেয়ে আর কষ্ট করে এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়তে হবে না। এতে করে তাদের আনন্দ হবে কারণ বেশি দুর হেঁটে স্কুলে যেতে হবে না তাই। তারা সকলেই এমন মহৎ উদ্দ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন।
লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক দৈনিক অধিকারকে বলেন, রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লোহাগাড়ায় বিদ্যালয়বিহীন প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে স্থানীয় উদ্যোগকে প্রেষণা দেই। তারই ধারাবাহিকতায় কয়েকবার মিরিখিলে উপস্থিত হয়ে গ্রামবাসীর পাশে থেকেছি, উৎসাহ দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও বিদ্যালয়টির যে কোনো কাজে সহযোগিতার আশ্বাস পোষণ করছি।
লেখক : শিক্ষার্থী, ওমরগণি এম.ই.এস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড